Business

Games

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে হেনস্তা করাটাও নারী নির্জাতন

 সমাজ বদলের আগে নিজেকে বদলান। মনে দ্বেষ পুষে রেখে দেশ বদল হয় না

রাত তখন ১২টার মত বাজে। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে শান্তিপূর্ণভাবে রাত দখল চলছে। অজস্র সাধারণ মানুষের ভিড়ে রয়েছেন বেশ কিছু রুপোলি পর্দার মানুষ। তাঁরা কেউ কোনও অসাধারণত্ব দাবি করেননি। রয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যম। এমন সময়ে শ্যামবাজারে পৌঁছন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। না, তাঁকে কেউ আমন্ত্রণ জানায়নি। তাঁর মনে হয়েছে আসবেন, এসেছিলেন। সম্প্রতি শঙ্খ বাজানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট ট্রোলিংয়ের শিকার হয়েছেন। সেই সব থেকে বের হয়েই এসেছিলেন, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, একজন নারী হিসেবে। শ্যামবাজারেই আসতে চেয়েছিলেন। এই ধরণের জমায়েতে পুলিশের পক্ষে আলাদা করে কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না মাথায় রেখেই এসেছিলেন। কোনও নিরাপত্তা চাননিও। ওখানে উপস্থিত আমরা কয়েকজন নিজেরাই ওঁকে একটু ধাক্কাধাক্কি থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। আবার বলছি, তাঁর অনুরোধে নয়। নিজেরাই। এর পরের ঘটনাক্রম কিন্তু 'সাধারণ' নয়। শুনুন:

একটা জায়গায় মোমবাতি জ্বালানোর পরে একটু এগিয়ে ঋতুপর্ণা আরেকটি জায়গায় মোমবাতি জ্বালাতে গেলেন। হঠাৎ করেই এক দল মানুষ অধৈর্য হয়ে 'গো-ব্যাক' স্লোগান দিতে শুরু করলেন। শুরুতে ইতস্তত করেও স্লোগানের তীব্রতা বাড়তে দেখে সেখান থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন ঋতুপর্ণা। ব্যাপারটা যদি এই পর্যন্ত হয়ে থেমে যেত, তাহলে কিচ্ছু বলার ছিল না। এই লেখার প্রয়োজনই হত না। কিন্তু, তার পরে কী ঘটল! গো-ব্যাক স্লোগান দিতে দিতে উত্তেজিত জনতা শ্রেণি যারা নাকি 'সুশীল নাগরিক সমাজ'-এর অংশ, তারা ঋতুপর্ণাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহের চেষ্টা করতে থাকেন এবং মারমুখী হয়ে ওঠেন। ঘটনার আকস্মিকতায় ওইখানে উপস্থিত আমরা সবাই বেশ হকচকিয়ে যাই। উত্তেজিত জনতা স্লোগান দেওয়ার পরেও প্রথম যেখানে মোমবাতি জ্বালিয়েছিলেন সেইখানে এসে মাটিতে বসেন ঋতুদি। নিপাট উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর শহরের মানুষ গুলোর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো।
আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করে ঋতুদিকে ওই জায়গা থেকে ঠিকভাবে বার করে নিয়ে যেতে পারি। প্রত্যেকের নাম এখানে মেনশন করছি। আমার অনুজ সাংবাদিক রাকেশ Rex Naskar III, অভিনেতা ভ্রাতৃপ্রতিম Rishav Basu, Rishav-এর টিমের এক বোন, অভিনেত্রী Ratasree Dutta, শিল্প নির্দেশক Amit Chatterjee এবং ঋতুদির ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী #Rahul Das. ঋতুদি বসে থাকাকালীন হঠাৎ আমাকে আর রাকেশকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় বেশ কয়েকজন। আমি প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ি ওঁর ঘাড়ের কাছে গিয়ে। আমি যখন উঠতে যাই, মারমুখী জনতার মধ্যে থেকে দু-তিনজন কনুই দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশ কয়েকবার জোরে আঘাত করে আমার ডান দিকের চোয়ালে, যেটা এখনও রীতিমতো ফুলে আছে। রাতাশ্রী চোট পায়। স্থানীয় একজনের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক সুশ্রুষা করতে হয়। সে এখনও ট্রমায়। রাকেশের পা মাড়িয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়, ফলশ্রুতি তার যথেষ্ট শক্ত জুতোর একটা অংশ ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়। কয়েকজন ইচ্ছাকৃতভাবে জলের বোতল দিয়ে বারবার সজোরে আঘাত করতে থাকেন আমার মাথার পেছনে। একজন রীতিমত পিছন থেকে টিপে ধরেন গলাও। রাহুল, ঋষভ, রাকেশ আর আমার পিঠে কত যে কিল, ঘুসি পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। উদ্দেশ্য ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে আঘাত করা! এরপরে কোনও রকমে ঋতুপর্ণাকে নিয়ে গিয়ে বসানো হল গাড়িতে। এবার সেই জনতার একাংশ চড়াও হল গাড়ি ভাঙচুর করার উদ্দেশ্য নিয়ে। গাড়ির কাচে অনবরত আঘাত চলতে থাকে। কয়েকজন মহিলা এসে নিজেদের ব্যাগ এবং বিভিন্ন জিনিস দিয়ে গাড়ির কাচে আঘাত করতে থাকেন। গাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েও ঋতুপর্ণা তাদের বোঝাবার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন যে তিনি সবার সঙ্গে একসাথে বিচারের দাবি জানাতে এসেছেন। কে শোনে কার কথা! স্লোগান এবং অসভ্যতা চলতে থাকল।
এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে অসামাজিকতার অবকাশ থেকেই যাচ্ছে এই সমাবেশ গুলোতে। কাল সেটারই পরিস্ফুরণ হল, আমার মনে হয়। প্রতিবাদের মোটিভ না বুঝেই প্রতিবাদে সামিল হওয়ার থেকে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করতে পথে নেমে কখনও নৈরাজ্যকে হাতিয়ার করা চলে না। যারা পথে নামলেন নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে, তারা একজন নারীকে হেনস্থা করবার আগে দু'বার ভাববেন না? এতে কলঙ্কিত হয় সমাবেশ, বিপ্লব। সমাজ বদলের আগে নিজেকে বদলান। মনে দ্বেষ পুষে রেখে দেশ বদল হয় না।
অনেকেই বলছেন, ঋতুপর্ণা আজকে এখানে এলেন কেন! আমি বলব, একদম ঠিক করেছেন। শ্যামবাজারে যেখানে সেই নারকীয় ঘটনা ঘটেছে, সেখানেই এক রাতে তিনি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, মা হিসেবে এসেছেন নারীর মর্যাদার লড়াইয়ে সামিল হতে। হায় রে, আমার কলকাতার নাগরিক সমাজ তাঁকে সেই মর্যাদাটুকু দিতে পারল না।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর শাঁখ বাজানোর ঘটনা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে, মানুষের ফেক মনে হয়েছে এবং সেই জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট ট্রোল করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সমাজের কোনও ক্ষতি করেননি তো! বরং ধর্নার নামে একাধিক রাজনৈতিক নেতা যারা বিভিন্ন মঞ্চে বসে থাকছেন তারা দস্তুর মত সমাজের ক্ষতি করে চলেছেন। সঠিক শত্রু চিনতে শিখুন। যে সব মানুষের উস্কানিতে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেন কিছু 'কোট আনকোট' সাধারণ মানুষ, তারা মনে রাখবেন একটা শ্রেণি কিন্তু দিনের শেষে নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছাতে ব্যস্ত।
ধর্ষকরা মিছিলে হেঁটে বেড়াচ্ছে, তাদের সঙ্গে সেলফিও তুলে ফেলছেন, ঠিক আছে। কিন্তু ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে যে আচরণ করা হল সেটা অন্যায়, অসভ্যতা এবং অসাংবিধানিক। কারণ তিনি অপরাধী নন যে একজন নারী হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে তিনি বিচারের দাবিতে পথে নামতে পারবেন না। তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক নেতার মত তিনি জেল খাটা আসামি নন, তিনি দিনের শেষে একজন শিল্পী।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর গাড়ি ওখান থেকে চলে যাওয়ার পর ফিরে আসার সময় মহিলাদের একটি দল রীতিমত আমাকে ঘিরে ধরে উত্তেজিত ভাবে প্রশ্ন করতে থাকেন কেন আমি ঋতুপর্ণাকে বাঁচাচ্ছিলাম! বিশ্বাস করুন, আশ্চর্য হয়ে গেছি আমি! আমি জানিনা তাদেরকে এই সাহস কে দিয়েছে একজনকে শারীরিক নিগ্রহ করতে চেষ্টা করার এবং নজিরবিহীন এই অসভ্যতা করার। তবে আবার বলছি, রাজনৈতিক মদত ছাড়া এই হুলিগানিজম্ সম্ভব নয়।
যাঁরা শুরু থেকে এই আন্দোলনকে বিপথগামী হওয়া থেকে বুক দিয়ে আগলেছেন, তাঁদের প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা। Sudipta Chakraborty, Sharmistha Goswami Chatterjee, Debjani Laha Ghosh এবং আরও অনেকের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন, কাদের নিয়ে পথে নামছি! বাঙালির জনজাগরণ দেখতে দেখতে আবেগে ভেসে কোনও ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো? কোনও মদতপুষ্ট হাতে স্টিয়ারিং ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তো! কোনও ভুল কথা বলে থাকলে ক্ষমা করবেন।
Rituparna Sengupta দি, ক্ষমা চাইছি তোমার কাছেও।
নিজেদের ভাগে রইল, ছিঃ। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ যদি না হয় তবে বলতে বাধ্য হব যে আপনারা নারীর মর্যাদার লড়াই করছেন না, তিলোত্তমাকে নিয়ে রাজনীতি করছেন।
©️
অতনু রায়

সত্যিই শাসক এবার শঙ্কিত, সন্ত্রস্ত। জারি হল কার্লাইল অ্যাক্ট ।

১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মতলবে বঙ্গ বিভাজনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ব্রিটিশ সরকার। তার আগে থেকেই রবীন্দ্রনাথ, আনন্দমোহন বসু, মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সহ স্বনামধন্য মানুষেরা বঙ্গ বিভাজনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলনে ব্যাপক সংখ্যায় অংশগ্রহণ করে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা। তরুণদের আবেগপূর্ণ অংশগ্রহণে প্রমাদ গোনে শাসক শ্রেণী। বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিন ছয়েক আগে, ১০ অক্টোবর, মুখ্যসচিব আর ডাব্লিউ কার্লাইল জেলা শাসকদের উদ্দেশ্যে একটি গোপন সার্কুলার পাঠান। তাতে বলা হয় স্বদেশী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ যেকোন মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। সেই সার্কুলারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ছাত্রসমাজ দ্বিগুণ উৎসাহে পথে নামে। যথারীতি সাম্রাজ্যবাদী শাসকের দাঁত-নখ তীক্ষ্ণ হয়। পুলিশি দমন-পীড়নের পাশাপাশি ছাত্রনেতাদের স্কুল-কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। রিপন কলেজের স্নাতক স্তরের ছাত্র শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু গড়ে তোলেন অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি। বহিষ্কৃত ছাত্রদের শিক্ষালাভের বিকল্প সুযোগ করে দেয় ওই সোসাইটি। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯০৬ সালের ১৪ই আগস্ট গঠিত হয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ। উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখ।

এতদিন পরে ফের সেই কার্লাইল সার্কুলারের প্রত্যাবর্তন ঘটল তথাকথিত মা-মাটি-মানুষের সরকারের হাত ধরে। আর জি কর হাসপাতালের নারকীয় ঘটনায় যুক্ত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ আজ পথে নেমেছেন। অভূতপূর্ব জনজাগরণ ঘটেছে সারা রাজ্য তথা দেশে, এমনকি প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে বিদেশেও। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও প্রতিদিন ব্যাপক সংখ্যায় পথে নেমে দৃপ্ত কন্ঠে প্রতিবাদ ধ্বনিত করছে। এই অবস্থায় গতকাল, ২৩ আগস্ট, রাজ্যের মুখ্যসচিব একটি সার্কুলার পাঠিয়েছেন জেলা শাসকদের কাছে। তার মূল কথাটি হল, প্রতিবাদী আন্দোলনে স্কুল পড়ুয়াদের অংশগ্রহণ বরদাস্ত করা হবে না!(আনন্দবাজার,২৪ আগস্ট ২০২৪)

এখন প্রশ্ন হল, গদি হারানোর ভয়ে সন্ত্রস্ত শাসকের এই সার্কুলার ছাত্রসমাজ বরদাস্ত করবে তো? ছাত্রদের দিকে তাকিয়েই তো বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম একদিন বলেছিলেন, "আমরা শক্তি আমরা বল/ আমরা ছাত্রদল!" নেতাজি বলেছিলেন, "মনুষত্ব লাভের একমাত্র উপায় মনুষ্যত্ব বিকাশের সকল অন্তরায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করা। যেখানে যখন অত্যাচার ও অনাচার দেখিবে সেখানে নির্ভীক হৃদয়ে শির উন্নত করিয়া প্রতিবাদ করিবে এবং নিবারণের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিবে।"(নূতনের সন্ধানে) সর্বোপরি মাথার উপরে রয়েছেন চিরভাস্বর রবি। সবুজের অভিযান কবিতায় তিনি বলেছেন --
"তোরে হেথায় করবে সবাই মানা।
হঠাৎ আলো দেখবে যখন
ভাববে একি বিষম কান্ডখানা।
সংঘাতে তোর উঠবে ওরা রেগে,
শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে,
সেই সুযোগে ঘুমের থেকে জেগে
লাগবে লড়াই মিথ্যা এবং সাঁচায়।
আই প্রচন্ড, আয় রে আমার কাঁচা।"
✍️
চন্দ্রপ্রকাশ সরকার
২৪ আগস্ট ২০২৪

ব্রিটানিয়া বিস্কুটকারাখানা বন্ধ , চাহিদা নেই একথা তো বলা যাচ্ছে না।

 দাদু খায়..... নাতি খায় ....


মনে পড়ে শৈশবে দেখা এই বিজ্ঞাপনের কথা?
থিন এরারুট নয় দোকানে গিয়ে বলতাম ব্রিটানিয়া বিস্কুট দাও তো ! জনপ্রিয় ঐ বিস্কুটের বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন ছিল দাদু ও নাতি। তাঁরা হয়তো বেঁচে থাকবে, কিন্তু কলকাতার বুক থেকে হারিয়ে গেলো দেশের প্রথম আধুনিক বিস্কুট কারখানা।
শুরুটা 1892 সালে, কলকাতায় একদল ব্রিটিশ ব্যবসায়ী মাত্র 295 টাকা দিয়ে বিস্কুট তৈরি শুরু করেছিলেন । প্রথমদিকে মধ্য কলকাতার একটি ছোট বাড়িতে বিস্কুট তৈরি করা হত। সংস্থাটি পরে গুপ্ত ব্রাদার্স কিনে নেয় , যার প্রধান ছিলেন নলিন চন্দ্র গুপ্ত । তিনি ভিএস ব্রাদার্স নাম দিয়ে উদ্যোগটি শুরু করেছিলেন । 1910 সালে এদেশে প্রথম ঐ কোম্পানি মেশিন দিয়ে বিস্কুট তৈরি শুরু করে ।
1918 সালে, কলকাতায় বসবাসকারী একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী সিএইচ হোমস এতে অংশীদার হিসেবে যোগ দেন। কোম্পানির নাম হয় ব্রিটানিয়া বিস্কুট কোম্পানি লিমিটেড। মুম্বই কারখানাটি 1924 সালে স্থাপিত হয়েছিল এবং লন্ডনের পিক ফ্রান্স নামে একটি বিস্কুট কোম্পানি বিবিসিও-তে নিয়ন্ত্রণকারী অংশ কিনে নেয়। এর পরেই ব্রিটানিয়া বিস্কুট জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় , ব্রিটানিয়া মিত্রশক্তির সৈন্যদের সরবরাহের জন্য সেই সময়ের সবচেয়ে বড় অর্ডার পেয়েছিল । সেই অর্ডার কোম্পানির বার্ষিক বিক্রয়কে 8 শতাংশ বাড়িয়ে 1.36 কোটিতে পৌঁছে দেয়।
1979 সালে কোম্পানির নাম ব্রিটানিয়া বিস্কুট কোম্পানি লিমিটেড থেকে ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড করা হয় । 1982 সালে , একটি আমেরিকান কোম্পানী, Nebisco Brands Inc. পিক ফ্রান্সিসের কাছ থেকে একটি অংশ কিনে নেয় এবং ব্রিটানিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার হয়ে ওঠে । আর 1983 সালে , কোম্পানির বিক্রয় 100 কোটি ছুঁয়ে ফেলে। 1989 সালে ব্রিটানিয়া তার হেড অফিস কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে সরিয়ে নেয়।
ব্রিটানিয়ার বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন মহম্মদ আলী জিন্নাহর নাতি নাসলি ওয়াদিয়া, বম্বে ডাইং এর মালিক এবং এমডি বরুণ বেরি। নাসলি ওয়াদিয়ার ছেলে নেস ওয়াদিয়া হলেন এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর। এছাড়া প্রাক্তন RBI গভর্নর উর্জিত প্যাটেল কোম্পানির একজন নন-এক্সিকিউটিভ স্বাধীন পরিচালক। কোম্পানির পরিচালনা নিয়ে ওয়াদিয়াদের সাথে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী বিস্কুট কিং রাজন পিল্লাইয়ের ভয়ঙ্কর বোর্ডরুম লড়াইয়ের সাক্ষী নব্বইয়ের দশক। রহস্যজনক ভাবে তিহার জেলে পিল্লাইয়ের মৃত্যু ইতি টানে সেই যুদ্ধের।‌🛑
উত্তর আমেরিকা , ইউরোপ , আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় 60 টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করা হয় ব্রিটানিয়ার পণ্য। ভারতে রয়েছে তাদের 50 লাখেরও বেশি খুচরা আউটলেট । সংগঠিত রুটির বাজারে ব্রিটানিয়া ব্রেড আজ সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড। সুতরাং চাহিদা নেই একথা তো বলা যাচ্ছে না। এতোদিন ব্রিটানিয়ার ভারতে ১৩টি কারখানা ছিলো । তাহলে অশুভ বলেই কি বন্ধ করে দেয়া হলো বছরে আড়াই হাজার টন বিস্কুট উৎপাদনকারী কলকাতার প্রথম কারাখানাটি....? কে দেবে জবাব!
কলমে 🖌️ স্বপন সেন 🌲

স্টেভিয়া চাষ লাভজনক

  ভেষজগুণে সমৃদ্ধ মিষ্টি গাছ স্টেভিয়া সৃষ্টিকর্তার এক অলৌকিক সৃষ্টি। এ গাছ শত শত বছর ধরে প্যারাগুয়ের পাহাড়ি অঞ্চল রিওমন্ডে এলাকায় চাষাবাদ হয়ে এসেছে। প্যারাগুয়ের গুরানী ইন্ডিয়ান নামক উপজাতীয়রা একে বলে কাহিহি অর্থাৎ মধু গাছ। ১৮৮৭ সালে সুইজ উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. এমএস বার্টনি প্রথম স্টেভিয়াকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেন। পৃথিবীতে স্টেভিয়ার প্রায় ৯০টি জাত এবং ২৪০টি প্রজাতি আছে। এদের মধ্যে স্টিভিয়া রিবাউডিয়ানা প্রজাতির পাতায় সবচেয়ে মিষ্টি উপাদান রিবাউডিওসাইড যৌগটি রয়েছে।

স্টেভিয়া গাছের সবুজ পাতাই মিষ্টি উপাদানের উৎস। চিনির চেয়ে স্টেভিয়ার পাতা ৩০-৪০ গুণ বেশি মিষ্টি। স্টেভিয়া পাতা সংগ্রহের পর সূর্যালোকে বা ড্রায়ারের মাধ্যমে শুকান হয়। তারপর ক্রাশ করে পাউডারে পরিণত করা হয়। এক কেজি পাতা শুকিয়ে প্রায় ২০০-৩০০ গ্রাম পাউডার পাওয়া যায়। স্টেভিয়া পাতার ১০০ গ্রাম নির্যাস থেকে ৪০ কেজি চিনির সমপরিমাণ মিষ্টি পাওয়া যায়। প্রসেস করলে মিষ্টির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। পাতা থেকে রিফাইন করা স্টিভিওসাইডের স্বাদ সাদা চিনির মতো এবং সাদা চিনির চেয়ে প্রায় ৪০০ গুণ বেশি মিষ্টি!
স্টেভিয়ার কাঁচা বা শুকনো পাতা সরাসরি চিবিয়ে খাওয়া যায়। প্রতি ১ কেজি খাবার মিষ্টিকরণের জন্য মাত্র ৭.৯ মিলিগ্রাম স্টেভিয়াই যথেষ্ট! এক গ্লাস পানিতে একটি কাঁচাপাতার রস মিশালেই অনেক মিষ্টি হয়ে যায়। খাবার এবং পানীয় দ্রব্যে ব্যবহার করা যায় স্টেভিয়া পাউডার, ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ। চা-কফিতে স্টেভিয়ার ব্যবহার বিশ্বব্যাপী। ১ কাপ চায়ে চা চামচের মাত্র ৪ ভাগের ১ ভাগ স্টেভিয়া পাউডারই যথেষ্ট!
ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি(EFSA) মানুষের ব্যবহারের জন্য স্টেভিওল গ্লাইকোসাইড ৪ মিলিগ্রাম/কেজি অ্যাডভাইজড ডেইলি ইনটেক(ADI) রেকমেন্ড করে। অর্থাৎ একজন মানুষের দিনে প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রায় ৪ মিলিগ্রাম পরিমাণ স্টেভিয়া(প্রসেসড) কনজিউম করা নিরাপদ। উদাহরণস্বরূপ, ৭০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তির প্রতিদিন ৭০×৪= ২৮০ মিলিগ্রামের বেশি স্টেভিয়া খাওয়া উচিত নয়।
মাত্রাতিরিক্ত স্টেভিয়া খেলে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (সুয়েলিং, বমি বমি ভাব, ব্যথা, পেশী দুর্বল হওয়া, মাথা ঘোরা, অ্যালার্জি ইত্যাদি) সৃষ্টি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে স্টেভিয়ার মূত্রবর্ধক ক্রিয়া(Diuretic) আছে। স্টেভিয়া কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে- 'স্টেভিয়া প্রাকৃতিক সুইটনার তাই মানবশরীরের জন্য নিরাপদ।' স্টেভিয়া পাতায় থাকে খনিজ, বিটা ক্যারোটিন, এন্টিওক্সিডেন্ট ও ভিটামিন। চিনির পরিবর্তে নির্ভয়ে স্টেভিয়া ব্যবহার করতে বলেন চিকিৎসকেরা। ইউকে গভর্নমেন্টের পুষ্টি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মার্গারেট অ্যাশওয়েল গবেষণা করে দেখেছেন- 'স্টেভিয়া কনজিউম করলে স্থূলতা কমে।' স্টেভিয়া পাউডার দিয়ে বানানো মিষ্টান্ন ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন।
১৯৬৪ সালে প্যারাগুয়েতে স্টেভিয়ার বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়। জাপানে শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। অল্পদিনের মধ্যেই ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু, চীন, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ইসরাইল, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া প্রভৃতি দেশে বাণিজ্যিকভাবে স্টেভিয়ার চাষ শুরু হয়। বর্তমানে চীনে স্টেভিয়ার ব্যাপক চাষ হলেও বাণিজ্যিক ব্যবহারের দিক দিয়ে জাপান বেশি এগিয়ে গেছে। জাপানে প্রায় ৪০ শতাংশ চিনির চাহিদা মেটানো হয় স্টেভিয়া দিয়ে।
Stevia

ক্যান্সার সৃষ্টিকারক হওয়ার কারণে ১৯৭০ এর দশকে জাপান সরকার আর্টিফিশিয়াল সুইটনার নিষিদ্ধ করে। জাপানে ১৯৭৩ সালের দিকে ৪৩ টি রিসার্চ সেন্টারে স্টেভিয়ার চাষ ও প্রাকৃতিক সুইটনার বানানো নিয়ে পরিক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়। তারপর কিছুদিনের মধ্যেই জাপানি সিজনিং, কোমল পানীয় এবং আইসক্রিমে স্টেভিয়ার ব্যবহার শুরু হয়। জাপানে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই নিশ্চিত করা হয়েছে যে মানুষের জন্য স্টেভিয়ার ব্যবহার নিরাপদ। বর্তমানে সেখানে কৃত্রিম চিনি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেমিক্যাল সুইটনারের বদলে তারা স্টেভিয়া ব্যবহার করে।
ভারতে ২০১১ সালে স্টেভিয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
কর্পোরেট ইন্ডাস্ট্রি, চিনি কোম্পানি, আর্টিফিশিয়াল সুইটনার কোম্পানি এবং চিনি রপ্তানি নির্ভর কিছু দেশ স্টেভিয়াতে বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে বলে বহুদিন অপপ্রচার চালিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে স্বয়ং USFDA (Food and Drug Administration) এর গবেষণায়ই প্রমাণিত হয়েছে- 'স্টেভিয়াতে কোনো ক্ষতিকারক পদার্থ নেই।' আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি স্টেভিয়াকে নিরাপদ বলে ঘোষণা দিয়েছে।
বেলজিয়ামের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইয়ান গ্যোন্স বলেন, "শুধু সুগার লবিই নয় কেমিক্যাল সুইটনার্স কর্পোরেশন গুলোও স্টেভিয়ার অগ্রযাত্রায় ক্ষতির সম্মুখীন হবে৷ অথচ ভোক্তারা চায় ন্যাচারাল সুইটনার্স৷ ইউরোপীয় আইন প্রাকৃতিক খাদ্যপণ্য বাজারে আসতে বাধা দিচ্ছে ফুড সেফটির ছুতোয়৷ টোবাকো লবির মত সুগার লবিও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে৷''
১৯৯১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্টেভিয়া ব্যান করা হয়। স্টেভিয়াকে USFDA নিষিদ্ধ করেছিল একটি ডামি গবেষণার ভিত্তিতে। যেখানে দাবি করা হয়েছিল স্টেভিয়া ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। মনসান্টো এটিকে বাজার থেকে সরিরে রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। স্টেভিয়া যেন অনুমোদন না পায় সেজন্য সুগার ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপক লবিং করেছিল। পরবর্তীতে সত্যিকারের গবেষণা প্রকাশিত হলে FDA স্টেভিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলতে বাধ্য হয়। একটি ফলো-আপ রিসার্চ আগের ডামি গবেষণাকে ভুল প্রমাণ করে। ১৯৯৫ সালে ইউএসএফডিএ স্টেভিয়াকে সুইটনার হিসাবে নয় শুধু নিউট্রিশন সাপ্লিমেন্টারি হিসাবে আমদানি এবং বিক্রি করার অনুমতি দেয়।
২০০৮ সালে স্টেভিয়াকে এফডিএ থেকে GRAS (সর্বসাধারণের জন্য নিরাপদ) স্বীকৃতি এবং মেইনস্ট্রিম মার্কিন ফুড প্রোডাকশনে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে স্টেভিয়া দিয়ে সব ধরনের খাবার এবং পানীয় তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাটোরেড ফিট, ভিটামিন ওয়াটার জিরো, সোবি লাইফওয়াটার, কোকা-কোলা লাইফ এবং ক্রিস্টাল লাইট সহ আরো অনেক ফুড ও বেভারেজ প্রোডাক্টের উপাদান হিসেবে স্টেভিয়া ব্যবহার হয়।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ কোটি মানুষ চিনির বিকল্প হিসাবে স্টেভিয়া ব্যবহার করে৷ তবে স্টেভিয়া এখনো চিনির স্থান দখল করতে পারেনি৷ ২০১০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বীকার করে যে স্টেভিয়ার উপাদান স্টিভিওল গ্লাইকোসাইড মানুষের জন্য নিরাপদ এবং ২০১১ সালে স্টেভিয়া ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্টেভিয়াকে পুরোপুরি ছাড়পত্র দিতে গড়িমসি করছে৷ কমার্শিয়াল ইউজের জন্য এখনো আনপ্রসেসড স্টেভিয়া অনুমোদিত নয়।
WHO এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন৷ বিশ্বে চিনি কনজিউম হয় প্রায় ১৮০ মিলিয়ন মেট্রিক টন৷ মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বিক্রি হয় ৬০ বিলিয়ন ইউরোর সমপরিমাণ৷ বাজারে স্টেভিয়া সহজলভ্য হলে ইউরোপীয় চিনি উৎপাদনকারীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে!
স্টেভিয়া পাতায় থাকা স্টেভিওল গ্লাইকোসাইড, রেবাউডিওসাইড-এ, স্টেভিওসাইড, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং টেরপেন যৌগগুলো স্টেভিয়ার মিষ্টতা ও ঔষধি গুণের জন্য দায়ী। স্টেভিয়াতে রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণ এবং স্থূলতা থেকে রক্ষা করে। ইনফ্লামেশন ও টিউমারের বৃদ্ধি থামাতে পারে এবং ক্যান্সার কোষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।
স্টেভিয়ার উপাদান ভাসোডিলেটর হিসাবে কাজ করতে পারে, যা রক্তনালীকে শিথিল করে এবং প্রশস্ত করে দেয়। এইভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে স্টেভিয়া। স্টেভিয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং ব্যাড এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা।
ইতিহাসবিদ ব্রিজেট মারিয়া চেস্টারটন বলেছেন, "ডায়াবেটিস আধুনিক রোগে পরিণত হওয়ার আগে স্টেভিয়া ডায়াবেটিসের একটি ওষুধ ছিল"
স্টেভিয়া পাতা—
• ডায়াবেটিস ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে
• উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে
• যকৃত, অগ্ন্যাশয় ও প্লীহায় পুষ্টি সরবরাহ করে
• অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে
• ত্বকের ক্ষত নিরাময় করে
• ত্বকের কোমলতা এবং লাবণ্য বাড়ায়
• দাঁতের ক্ষয় রোধ করে
• ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দমন করে
• খাদ্য হজমে সহায়তা করে
• শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে
• অ্যান্টি-হাইপারগ্লাইসেমিক: এটি অগ্ন্যাশয় কোষের কার্যকলাপ, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং ইনসুলিন উৎপাদন ইমপ্রুভ করতে পারে। যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসায় সহায়ক।
• অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ: স্টিভিওসাইড যৌগ রক্তনালীর এন্ডোথেলিয়াল কোষে ক্যালসিয়াম আয়নকে প্রবেশ করতে বাধা দিয়ে রক্তচাপ কমায় এবং হাইপারটেনসিভ রোগীদের রক্তনালী সংকোচন হ্রাস করে।
• অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: এতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার মধ্যে রয়েছে ওপিজেনিন, কেমফেরল এবং কুয়েরিট্রিন। এগুলো ডিএনএ স্ট্র্যান্ডের ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
• অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক: স্টিভিওল গ্লাইকোসাইড চারটি উপাদান নিয়ে গঠিত। যথা- স্টিভিওসাইড, রিবাউডিওসাইড-এ, রিবাউডিওসাইড-সি এবং ডুক্লোসাইড-এ। এগুলো অ্যান্টি-কারসিনোজেন হিসেবে ১২-০-টেট্রাডেকানয়লফোরবোল-১২-অ্যাসিটেট (TPA) দ্বারা প্রদাহ সৃষ্টিকে দৃঢ়ভাবে বাধা দেয়।
• অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল: স্টেভিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি ঠেকায়।
• অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি: স্টেভিয়া প্রদাহ এবং ইমিউনো-মডুলেশন কমাতে সহায়ক। এটা কোষে প্রদাহ সৃষ্টিকারক এজেন্টগুলোর সংশ্লেষণ হ্রাস করে।
• কার্ডিওভাসকুলার অ্যাক্টিভিটি: স্টেভিয়ার কার্ডিওটোনিক অ্যাকশন মানুষের সংবহনতন্ত্রের ক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে।
• ডাইজেস্টিভ টনিক এক্টিভিটি: স্টেভিয়া ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের উন্নতি ঘটায় এবং ক্ষুধা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
• ডার্মাটোলজিকাল অ্যাক্টিভিটি: স্টেভিয়াকে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার(যেমন- ব্রণ) একটি কার্যকর ওষুধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। স্টেভিয়ার নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের গঠন উন্নত করে এবং ত্বক ঝুলে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি স্টেভিয়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এদেশে সারা বছরই লাভজনকভাবে স্টেভিয়া চাষ করা সম্ভব। বৃষ্টির পানি জমে না এরকম জৈব পদার্থযুক্ত লাল ক্ষারীয় মাটিতে স্টেভিয়া ভালো জন্মে। হেক্টরপ্রতি ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার কেজি শুকনো পাতা উৎপাদন হয়। ভারতে বিভিন্ন কোম্পানি চাষীদের চুক্তিভিত্তিক চারা সরবরাহ করে এবং তাদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে স্টেভিয়া পাতা কিনে নেয়। আমাদের দেশে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে একই পদ্ধতিতে তামাক চাষ করা হয়। ক্ষতিকর তামাক চাষের পরিবর্তে ঐ অঞ্চলে স্টেভিয়া চাষ হতে পারে।
বাসাবাড়িতে সহজেই স্টেভিয়া চাষ করা যায়। সারা বছরই বাড়ির বারান্দায় বা ছাদে টবে স্টেভিয়া চাষ করা সম্ভব। বাংলাদেশে বিএসআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদটি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন ২০০১ সালে। বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কুয়াশা মাহমুদ জানান, "ঔষধি উদ্ভিদ স্টেভিয়া সহজে চাষ করা যায়। টবেও চাষ করা যায়। বাংলাদেশের যেকোনো এলাকায় এর চাষ সম্ভব। একবার লাগালে তিন থেকে চার বছর নতুন করে চারা লাগানোর প্রয়োজন পড়ে না। স্বল্প শ্রম ও খরচে স্টেভিয়া উৎপাদন হয়।"
তথ্যসূত্র:
৭। সায়েন্স ডাইরেক্ট
৮। ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেক ইনফরমেশন
১০। cancer.gov