Business

Games

ড্যাম দিয়ে দিল্লীর পানি আটকাবেন! বাংলাদেশের ভূগোল আপনি বুঝেনতো?

     ড্যাম দিয়ে দিল্লীর পানি আটকানো কোন প্র্যাকটিকাল সলিউশন নয়। কারণ বাংলাদেশ সমতল ভূমি, ড্যামের জন্য যে পাহাড়ি এলাকা লাগে ন্যাচারাল ব্যরিয়ারের জন্য তা নেই, পিলারের জন্য যে পাথর লাগে তা মাটির ২০০ ফুট নীচে ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ প্র্যাক্টিক্যাল প্রবলেম আছে।

পানি উপর থেকে নীচে প্রবাহিত হয়। নদীগুলো যখন ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তখন ভারতে পড়েছে নদীর আপার স্ট্রিম, আর আমরা পেয়েছি লোয়ার স্ট্রিম। লোয়ার স্ট্রিমে ড্যাম দিয়ে আপার স্ট্রিমের ড্যাম খুলে ছেড়ে দেয়া পানিকে আটকানো কোনো প্র্যাক্টিক্যাল সলিউশান না।
কেউ কেউ আবার বলছে বাংলাদেশ ৭,৫০০ ফুট উঁচু ড্যাম দিবে। তারা কী জানে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ড্যামের উচ্চতা কেবল ১,০০১ ফুট। যা চীনের জিনপিং-১ ড্যাম। আমেরিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল আর উচু ড্যামের উচ্চতা ৭৭০ ফিট।
বন্যা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর আর সম্ভাব্য উপায় হলো ভারতের সাথে বসে একটা সলিউশনে আসা। কিন্তু ভারত তো ভারত। তারা খালি নিতে জানে, দিতে না। তারা বিভিন্ন নদীগুলোর পানি ডাইভার্ট করে আমাদের নদীগুলোকে হয় শুকিয়ে মারছে, আর না হয় নিজেদের প্রয়োজনে বিনা ওয়ার্নিং এ ড্যামের গেইট খুলে দিয়ে ডুবিয়ে মারছে। যা চরম অসভ্যতা। পানি শেয়ারে যে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী আছে, তা তারা মনে না। কোন একটা প্রতিবেশির সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক নেই। যারা ভাবছেন ভালো প্রতিবেশী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা একদিন না একদিন বুঝতে পারবে, আমার মতে পারবে না। ভালো প্রতিবেশী হওয়া তাদের ইচ্ছাতেও নেই, আদতেও নেই।
ভারত কখনোই বাংলাদেশকে তাদের ন্যায্য পানি দেয় না। এর জন্য কোর্ট কাচারি করে চাপ সৃষ্টি করা গেলেও তারা এতেই নমনীয় হয়ে সুড়সুড় করে আমাদের ন্যায্য পানি আমাদের দিবে বলে বলে মনে করি না। বাস্তবে তারা কোন কোর্টের রায় মানবে না। এবার সেটা জাতিসংঘ হোক কী আইসিজে বা অন্য কোনো।
এই ব্যাপারে ভারতকে অন্য ভাবে চাপে ফেলতে হবে। একদিকে চীন, নেপাল, ভুটান যারা ভারতের আপার স্ট্রিমে আছে তাদের সাথে নিয়ে নদী চুক্তিতে যেতে হবে। অপরদিকে ভারত স্থল আর নৌ পথে আমাদের যেসব ট্রানসিট ব্যবহার করে সেগুলো বন্ধ করে ভারতকে পানির সুষম বণ্টনে নেগোশিয়েট করতে বাধ্য করতে হবে।
অপর দিকে, আমাদের নদীগুলো কিভাবে এই বাড়তি পানির চাপ নিয়ে পানি সরিয়ে সাগরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেলতে পারবে তার বিকল্প আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। জলবায়ুর কারণে সারা বিশ্বে বৃষ্টি, জলোচ্ছাস, খরা, বন্যা , সমুদ্রের লেভেল ইত্যাদি বেড়ে গেছে। এসব প্রতিরোধে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে, সেমিনার হচ্ছে, সেসব এটেন্ড করে বিভিন্ন উপায়ে শিখে এসে দেশে তা প্রয়োগ করতে হবে। দেশে বিদেশে আমাদের নিজেদের প্রচুর এক্সপার্ট আছে, তাদের নিয়ে একটা এক্সপার্ট গ্রুপ বানিয়ে খুব দ্রুততার সাথে সলিউশনের দিকে আগাতে হবে।
ছবি চীনের থ্রী গর্জেস ড্যাম

ভারতকে পানি বণ্টন আর নিয়ন্ত্রণের জন্য রেগুলার মিটিং করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে। ভারতের সাথে যে কোনো দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে কেবল এডমিনিস্ট্রেশনের লোক নয় , টেকনিক্যাল এক্সপার্টদেরও পাঠাতে হবে, যাতে তারা ভারতীয় এক্সপার্টদের ভূজুং ভাজং করণগুলোকে নিজেদের লজিক আর কারণ সহ মোকাবেলা করতে পারে। আমাদের ভাষাগত দুর্বলতার কারণে বেশিরভাগ সময়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাগুলোতে ভারতীয় টিম ডমিনেট করে, এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশি টিম মেম্বারদের ইংরেজি ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ আর বোল্ড হতে হবে যাতে তারা মিটিংগুলোতে চুপ না থাকে। মোট কথা ভারতের স্ট্রং ম্যান ট্যাক্টিককে আমাদের স্ট্রং ম্যানেরা গিয়ে শক্ত ভাবে মোকাবেলা করবে।
আর আমাদের দেশে বিভিন্নভাবে ভারতের যে অগাথ বিচরণ, তাকে ল্যাভরেজ হিসাবে ফেলে ভারতের হাত টুইস্ট করতে হবে। আগের মতন কেবল দিয়েই যাবো না। আমাদের থেকে কিছু চাইলে আমাদেরকেও কিছু দিতে হবে। যতদিন দিবে, ততদিন পাবে। সমানে সমান ডিল হবে।

"আমার কিছু স্বপ্ন আছে। গাজা যুদ্ধ স্থল থেকে ফরিদা

"আমার কিছু স্বপ্ন আছে। আমার পরিবার এবং বন্ধুদের একটি বিশাল বৃত্ত রয়েছে। জীবনটা ভারী সুন্দর। আমরা যখন মরে যাব, তখন কী ঘটছিল সে সম্পর্কে কেউ কিছুই জানবে না। দয়া করে আমি যা বলছি তা লিখে রাখুন। আমি আমার কথা পুরো বিশ্বকে জানাতে চাই। কারণ আমি কেবল একটি সংখ্যা নই,” বলেছিলেন ফরিদা। গাজা সিটির বাসিন্দা বছর ২৬-এর ফরিদা ইংরেজি পড়ান। অক্টোবরে তিনি তাঁর প্রথম মেসেজে লিখেছিলেন, "আমার পাশের তিনটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমাদের সবাইকে এখান থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে কিন্তু কোথায় যাব জানি না। আমরা শুধু অপেক্ষা করছি। আমার অনেক বন্ধু নিখোঁজ, হয়তো মারা গিয়েছে। এমনকি আমার বাবা-মায়ের কথাও জানি না।”


গতবছরের অক্টোবর মাসে ফরিদা তাঁর ছয় সন্তান আর ভাইবোনদের নিয়ে দক্ষিণ গাজার দিকে পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাঁরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হাঁটছিলেন আর রাস্তাতেই ঘুমোচ্ছিলেন। তাঁরা ওয়াদী গাজার সেই অংশে যেতে চাইছিলেন, যেই অংশটা ইসরায়েল সুরক্ষিত বলে জানিয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছু দিন রাস্তায় কাটানোর পর তাঁরা বুঝতে পারেন কোথাওই তাঁরা নিরাপদ নন। শেষপর্যন্ত উত্তর গাজায় পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। "আমরা দক্ষিণে থাকার কোনও জায়গা পাইনি। সামান্য প্রয়োজনের জিনিসও আমাদের কাছে ছিল না। আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ চলছিল। নিজেদের সম্মান রক্ষার খাতিরে অন্তত আমরা ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চারপাশে কী ঘটছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমাদের চারপাশে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ হচ্ছে আর বাচ্চারা কেঁদেই চলেছে। কোথায় যাব আমরা জানি না। গাজায় রাতেও আপনি জানেন না পরদিন সকাল পর্যন্ত বাঁচবেন কি না। দিনে যদি চার-পাঁচ মিনিটও শান্তিতে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারি তাহলে আমরা খুবই খুশি হয়ে যাই। আমি এখন হিজাব পরে আমার পরিবারের সঙ্গে বসে আছি। আকাশপথে যে কোনও বোমা হামলার মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।” শেষবারের মত জানিয়েছিলেন ফরিদা। উত্তর গাজায় ফিরে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই বোমা হামলায় তাদের বাড়ির একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ধ্বংস হয়ে যায় রাস্তা।
যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস আগে আব্দেলহাকিম সফটওয়্যারে ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। যুদ্ধে তাঁদের আশ্রয়স্থল মধ্য গাজার আল বুরেইজ শরণার্থী শিবির। তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালে বিস্ফোরণের সময় তাঁর অনেক বন্ধু সেখানে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন আহত হন আর অন্যজনের পুরো পরিবার মারা যায়। ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় রেকর্ড করা ভিডিওতে তিনি বলছিলেন, “আমার বয়স ২৩ বছর। আমি এখনও পর্যন্ত বেঁচে আছি। জানি না আমার কাহিনী প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকব কি না। যে কোনও সময়ে, আমি জঙ্গি বিমানের শিকার হতে পারি। আমরা সবাই বসে ছিলাম যখন হঠাৎ একটি রকেট বাড়িতে পড়ে। আশ্চর্যজনক ভাবে আমি এবং আমার পরিবার বেঁচে গেছি। আমরা অনেক কষ্টে বার হতে পারলেও আমাদের প্রতিবেশীরা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। আমরা তাদের খুঁজতে গিয়েছিলাম, কিন্তু কাউকে পাইনি। বাড়ির কিছু অংশ ঠিক করছি যাতে আমরা এখানে থাকতে পারি আর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে পারি। প্রতি মিনিটে, প্রতি ঘন্টায় আমরা মৃত্যুর ঘেরাটোপের মধ্যে বেঁচে আছি। আমাদের কাছে জল নেই। ওষুধ, বিদ্যুৎ বা অন্য কোনও প্রয়োজনীয় জিনিস নেই। ভাই-বোনদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া এক টুকরো রুটি ছাড়া, আমি তিন দিন ধরে কিছুই খাইনি। গত ১২ দিনে আমি এবং আমার পরিবার ১০ ঘণ্টাও ঘুমাইনি। আমরা খুব ক্লান্ত। উদ্বেগের কারণে আমরা বিশ্রামও নিতে পারছি না। সাহায্যের জন্য আমি কিছুই করতে পারিনি। চারপাশে শরীরের টুকরো দেখে কেমন যেন স্থবির হয়ে গিয়েছিলাম। এখানে কেউ নিরাপদ নয়, আমরা সবাই শহীদ হতে চলেছি।"
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও আব্দেল হাকিম সাহায্য করে চলেছেন অন্যদের। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে নিয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে ত্রাণ বিতরণ করছেন। তিনি বলছেন, "আমরা ত্রাণ সামগ্রী এবং কম্বল প্রস্তুত করছি। শিশুরাও সাহায্য করছে। মিশর থেকে ট্রাক আসার জন্য অপেক্ষা না করে আমরা নিজেরাই উদ্যোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
খালিদ উত্তর গাজার জাবালিয়ায় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবারহ করেন। আকাশপথে বিলি করা সতর্ক-বার্তাবাহী প্রচারপত্র পাওয়ার পরও খালিদ কিন্তু তাঁর পরিবারের সঙ্গে অন্যত্র যেতে রাজি হননি। অক্টোবরে একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছিলেন, “কোথায় যাব আমরা? কোনও স্থানই সুরক্ষিত নয়। সর্বত্র একই অবস্থা। যে কোনও পরিস্থিতিতেই আমরা মরব।” তিনি যখন মেসেজটি পাঠাচ্ছিলেন, পিছনে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল। খালিদ তাঁর নিকট আত্মীয়ের দু’জন ছোট শিশুরও দেখাশোনা করেন। পাশের বাজারে হওয়া হামলায় বেঁচে গিয়েছিল ওই দু’জন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি চিকিৎসা সরঞ্জাম যে বিক্রি করতে পারছেন না, সে কথাও খালিদ জানিয়েছেন। “আহত মানুষের সংখ্যা বিপুল এবং সেই কারণে ওষুধের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। কিছু ওষুধ কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, অথচ ওগুলো জরুরি ওষুধ ছিল।"
খালিদের সাথে শেষ যোগাযোগ হয়েছিল অক্টোবরে। সে জানিয়েছিল - “ওরা ক্রমাগত আমাদের উপর বোমাবর্ষণ করছে এবং আমরা জানি না কখন রুটি আনতে বাইরে যেতে পারব। খাবার সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ নেই। আমরা নষ্ট খাবার,পচে যাওয়া টমেটো খাচ্ছি। ফুলকপি থেকে পোকামাকড় বেরিয়ে আসছে। এটি খাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই কারণ অন্য কিছুই নেই। পচে যাওয়া অংশগুলো ফেলে দিয়ে বাকিটাই খেতে হবে।" নিরুপায় ভাবে তার আর্তি ছিল "আমি যাচ্ছি না। এখন আমরা ভাবছি, হে আল্লাহ, পরবর্তী বোমা কখন পড়বে যাতে আমরা সবাই মরতে পারি এবং শান্তি পাই।" ৩১শে অক্টোবর তিনি যে অঞ্চলে থাকতেন, সেই জাবালিয়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর থেকে আর যোগাযোগ করা যায়নি তার সাথে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই হামলায় ১০১ জন নিহত ও ৩৮২ জন আহত হয়েছেন।
গাজার খান ইউনিসে বসবাসরত যুবক অ্যাডাম একদিনে পঞ্চমবারের মতো নিরাপদ স্থানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নভেম্বরে। পেশায় শ্রমিক ওই যুবক বলেছিলেন, “গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে দক্ষিণে চলে যেতে বলা হয়েছে, বিশেষত খান ইউনিসে। তবে খান ইউনিসেও বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। একটা বোমা তো আমার বাড়ির কাছে পড়েছিল।” ইসরায়েল গাজাকে সম্পূর্ণ অবরোধ করার পর খাদ্য, ওষুধ ও পেট্রোল দ্রুত কমে এসেছে। পার্কিনসনস রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবার যত্ন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিও অ্যাডাম পাচ্ছেন না। এমনকি হাসপাতালেও কোনও শয্যা পাননি তিনি। আগের রাতে তাঁকে একটি হাসপাতাল চত্বরের মেঝেতে ঘুমোতে হয়েছিল। পরিবারের জন্য প্রতিদিন খাবার খোঁজার লড়াইয়ে শামিল অ্যাডাম বলেছেন, "লাইনে না দাঁড়িয়ে খাবার পেতে আমাকে প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। যখন আপনাকে স্কুল প্রাঙ্গণে ঘুমোতে হয়, তখন আপনার ভিতরে একটা ভাঙন ধরে। যখন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঘুমোতে হয়, তখন আপনার ভেতরে কিছু একটা ভেঙ্গে যায় বৈকি। রুটির জন্য লাইনে দাঁড়ালে অথবা জলের জন্য কাকুতি মিনতি করার সময়ও তীব্র ভাঙন ধরে।” শেষ বার্তায় সে বলেছিল, “আমি আপনাদের এই পুরো ঘটনাটি জানিয়ে রাখতে চাই, যাতে এটা নথি হিসাবে থেকে যায়, যাতে বিশ্ব চিরকাল লজ্জা বোধ করে যে আমাদের সঙ্গে যা হল, তারা সেটা ঘটতে দিয়েছে।”
বছর পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধ চলছে। মিশর সংলগ্ন রাফাহ সীমান্তে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলিকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে যে পরিমাণ পণ্য আসছে তা গাজার বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই নয়। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪ লাখেরও বেশি মানুষকে তাঁদের ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে। প্রথম চার সপ্তাহে ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে চার হাজারেরও বেশি শিশু।
ফরিদা, অ্যাডাম, খালিদ, আব্দেলহাকিম এখনো বেঁচে আছেন কি না, জানি না। এই নারীঘাতি, শিশুঘাতি যুদ্ধের শেষও অজানা। শুধু জানি, গল্প হয়ে থেকে যাবে ঘটনাগুলো। ফরিদার অপূরিত স্বপ্ন রয়ে যাবে আমাদেরই কারও বুকে। মুক্তির অবিচল লক্ষ্যে এগিয়ে চলা হাজার হাজার সেনানী একদিন জবাব চাইবে ঠিকই। শুরু হবে সব যুদ্ধের অবসানের যুদ্ধ। আকাশে সেদিন আর বিমানের কালো ধোঁয়া উড়বে না। নীল আকাশটা আরও নীল হয়ে যাবে তারপর থেকে।
কৃতজ্ঞতা :গৌরব ঘোষ

চলে গেলেন মার্কিন ভাষাতত্ত্ববিদ, দার্শনিক,সমাজকর্মী নোয়াম চমস্কি।

 চলে গেলেন মার্কিন ভাষাতত্ত্ববিদ, দার্শনিক,সমাজকর্মী নোয়াম চমস্কি।



  নোয়াম চম্‌স্কি (পূর্ণনাম আভ্রাম নোম চম্‌স্কি; ইংরেজি: Avram Noam Chomsky); জন্ম ৭ই ডিসেম্বর, ১৯২৮) একজন মার্কিন তাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সমালোচক। তিনি বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি নামক মার্কিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক (Emeritus professor) এবং একই সাথে ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা নামক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক অধ্যাপক (Laureate professor) হিসেবে কাজ করছেন।

  চম্‌স্কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরে এক মধ্যবিত্ত আশকেনাজি ইহুদী অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতোকত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে তিনি পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে ভাষাবিজ্ঞানে ডক্টরেট সনদ লাভ করেন। তার উপদেষ্টা ছিলেন মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী জেলিগ হ্যারিস। স্নাতোকত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করার সময় চম্‌স্কি ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি নামক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কনিষ্ঠ গবেষণাকর্মী (Junior research fellow) হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি নামক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি ও জার্মান ভাষার প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি সেখানকার ভাষাবিজ্ঞানের ইন্সটিটিউট অধ্যাপক পদ লাভ করেন।

   বিগত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ভাষাবিজ্ঞান শাস্ত্রে চম্‌স্কির কাজ গভীর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। তিনি ১৯৫৭ সালে তার সিন্ট্যাকটিক স্ট্রাকচার্স গ্রন্থে "রূপান্তরমূলক উৎপাদনশীল ব্যাকরণ" নামক তত্ত্বটির অবতারণা করেন, যা অনেকের মতে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে এক "বিপ্লবের" সূচনা করে। চম্‌স্কি ভাষাবিজ্ঞানকে মানবমন-সংক্রান্ত গবেষণার কেন্দ্রে স্থাপন করেন। চম্‌স্কির আবির্ভাবের আগে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভাষাবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাষার বহিঃস্থ কাঠামোর সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য নিয়ে বেশি গবেষণা করতেন। তিনি ভাষা ও মানবমনের গবেষণাতে এই অভিজ্ঞতাবাদী ধারার সমালোচনা করেন এবং যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থনে যুক্তি দেন। তার মতে প্রতিটি মানব শিশু জন্মের সময়েই যেকোনও ভাষা অর্জন করার ক্ষমতার মূল উৎপাদনশীল নিয়মগুলি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই বিশ্বজনীন নিয়মগুলি মানুষের অবচেতন মনে অবস্থান করে এবং ভাষাবিজ্ঞানীদের কাজ হল স্বজ্ঞা ও যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই নিয়মগুলির প্রকৃতি উদ্ঘাটন করা। কেবল ভাষাবিজ্ঞান নয়, চম্‌স্কি বোধন বিজ্ঞান এবং মন ও ভাষার দর্শন শাস্ত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার এই তাত্ত্বিক অবদানগুলি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে "বোধনবৈজ্ঞানিক বিপ্লবের" সূচনা করে ও এর ক্রমবিকাশে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।

    চম্‌স্কি রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী হিসেবে মার্কিন আভ্যন্তরীণ রাজনীতি, বৈদেশিক নীতি ও বুদ্ধিজীবী সংস্কৃতির উপর তথাকথিত মার্কিন "অর্থনৈতিক অভিজাতদের" ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্লেষণ করেন, যার সুবাদে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগী অর্জন করেন। তিনি কিশোর বয়সেই স্থানীয় সংবাদপত্রে রাজনীতির উপর লিখতেন। কিন্তু রাজনীতি নিয়ে বেশি করে লেখালেখি শুরু করেন ১৯৬০-এর দশক থেকে। সেসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি ছিল তার আলোচনার বিষয়। এরপর মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ব্যাপারে সাধারণ মার্কিন জনগণের ঐকমত্য "উৎপাদন" করার ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও শিক্ষায়তনিক সম্প্রদায়গুলির ভূমিকার তীক্ষ্ণ সমালোচনা করে অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করেন। চম্‌স্কি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ধ্বংসাত্মক ফলাফলগুলি নিয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন যে মার্কিন বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হল মার্কিন সরকারের অনৈতিক নীতিগুলির যৌক্তিক সমালোচনা করা এবং এই নীতিগুলিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে ব্যবহারিক রাজনৈতিক কৌশল অনুসন্ধান করা। রাজনৈতিকভাবে চম্‌স্কি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যভিত্তিক সমাজতন্ত্র ও নৈরাজ্যমূলক শ্রমিকসংঘবাদের অনুসারী ছিলেন।

ব্রিটিশ রাণীর মৃত্যুঃ মোদির দ্বিচারিতা

 google keyword

লিখেছেনঃ চন্দ্রপ্রকাশ সরকার



প্রিয়ভাজন শিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত প্রথম মোবাইলে ফোন করে খবরটা জানালেন। খবরের সত্যতা সম্পর্কে সংশয় ছিল তাঁর এবং আমারও। ভেবেছিলাম আজকাল তো ফেক নিউজের ছড়াছড়ি। এটাও বোধহয় কেউ মজামস্করা করে বাজারে ছেড়েছে! খবরটির সত্যতা যাচাই করতে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হলো। টিভি চ্যানেলগুলো গরুচোর, কয়লাচোরদের তরজা দেখিয়ে টিআরপি বাড়াতে ব্যস্ত। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায়ও খবরটি খুঁজে পাওয়া গেল না টিভির পর্দায়। শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেল, খবরটি নকল নয়। ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোকাতুর কেন্দ্রীয় সরকার আগামী ১১ সেপ্টেম্বর সমস্ত সরকারি দপ্তরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার হুকুমনামা জারি করেছেন।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ১৫ আগস্ট 'হর ঘর তিরঙ্গা' দিয়ে সাড়ম্বরে শুরু হয়েছে 'আজাদী কা অমৃত মহোৎসব'। এক বছর ধরে দেশজুড়ে চলবে এই মহোৎসব। এরই মধ্যে এই কান্ড! যারা ভারতের স্বাধীনতা হরণ করেছিল, দীর্ঘ ১৯০ বছর ধরে পদানত করে রেখেছিল ভারতবাসীকে, সেই 'মহান গণতান্ত্রিক' দেশের রানীর মৃত্যুতে জাতীয় শোক পালন না করলে চলে! দেশের অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং সাধারণ মানুষ যখন ব্রিটিশের অকথ্য নির্যাতন সহ্য করেছেন, হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি গলায় পরে নিয়েছেন বীর বিপ্লবীরা, যখন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীকে পুনর্গঠিত করছেন, সেই সময় হিন্দুত্ববাদের প্রথম প্রবক্তা দামোদর বিনায়ক সাভারকর আন্দামানের সেলুলার জেলের সেল থেকে বার চারেক ক্ষমাভিক্ষা চেয়ে চিঠি দিচ্ছেন ব্রিটিশ শাসকের কাছে। চিঠিতে বলছেন, তাকে ছেড়ে দেওয়া হলে সর্বতোভাবে ব্রিটিশ সরকারকে সাহায্য করবেন, হিন্দু যুবকদের ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। ছাড়া পাওয়ার পর কথা রেখেছিলেন সাভারকর। এই সাভারকরকে যারা 'বীর' শিরোপায় ভূষিত করেছেন, তারাই আজ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্যের শাসন ক্ষমতায়। তারাই আজ কথায় কথায় দেশবাসীকে দেশপ্রেমের পাঠ শেখাতে চান। পুরনো প্রভুর প্রতি ভক্তিবশত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশও বোধকরি ওই দেশপ্রেমের পাঠ্যসূচিরই অন্তর্ভুক্ত!

সরকার নিজেই যদি জাতীয় পতাকার অবমাননা করে তাহলে তার মর্যাদা রক্ষায় দেশবাসীরই এগিয়ে আসা উচিত। সরকারি দপ্তরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হলেও নিজেদের বাড়িতে ওইদিন ওই পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার স্বাধীনতা নিশ্চয়ই আমাদের আছে!

যুদ্ধবিরতি হলে গাজায় ত্রাণ নিয়ে ঢুকবে একটার পর একটা ট্রাক।

প্রবল আর্ন্তজাতিক এবং অভ্যন্তরীন চাপের মুখে ইজরায়েল বাধ্য হচ্ছে চারদিনের যুদ্ধবিরতিতে যেতে। যে দু'টি মূল লক্ষ্য নিয়ে ইজরায়েল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছিল, তার একটিও সফল হয়নি৷ প্রথমত, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ধ্বংস করা দূরের কথা, তাদের রকেট আক্রমণ বন্ধ করতেও পারেনি ইজরায়েল। দ্বিতীয়ত, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্থল অভিযান চালিয়ে তারা মাত্র একজন যুদ্ধবন্দিকে উদ্ধার করতে পেরেছে।
movement for free Palestine

ইজরায়েল গত দেড় মাসে যা করতে পেরেছে, তা হল নৃশংস গণহত্যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা এবং উত্তর গাজার একটি বড় অংশের দখল নেওয়া। যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইজরায়েলে একের পর বিক্ষোভ হয়েছে। নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি উঠেছে। ইজরায়েলের রাজধানীতে প্রতিদিন যুদ্ধবন্দিদের পরিজনরা মিছিল করছেন। মাকি, হাদাস-সহ ইজরায়েলের জায়নবাদ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলি অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবি তুলেছে। চলমান সংঘর্ষের জন্য তাঁরা নেতানিয়াহুর অতিদক্ষিণপন্থী সরকারের আগ্রাসী পদক্ষেপকে দায়ি করেছেন।
যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসাবে ৫০ জন ইজরায়েলি যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দেবেন ফিলিস্তিনের সশস্ত্র যোদ্ধারা। অন্যদিকে ইজরায়েলের জেল থেকে মুক্তি পাবেন ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি। যুদ্ধবিরতির সময়কালে গোটা গাজায় ইজরায়েলের সামরিক অ্যাকশন বন্ধ থাকবে। দক্ষিণ গাজায় ড্রোন নজরদারি বন্ধ রাখবে ইজরায়েল, উত্তর গাজায় দিনে সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টা নজরদারি করতে পারবে। এই সময়কালে ইজরায়েল কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে না। গাজায় বিপুল পরিমাণ ত্রাণ ঢুকবে। তবে উত্তর গাজা থেকে যারা ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরা সম্ভবত ফিরতে পারবেন না৷ এই শেষ বিষয়টা জায়নবাদীদের একমাত্র বড় সাফল্য, কারণ এর মাধ্যমে তার অবৈধ দখলদারি আরও খানিকটা বাড়বে।
মনে রাখা দরকার, গাজায় হামাস একা জায়নবাদী দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছে না। বামপন্থী গেরিলা পিএফএলপি, ইসলামিস্ট পিআইজে, সেকুলার আল আকসা মার্টিয়ার্স ব্রিগেড-সহ একাধিক শক্তি প্রতিরোধের ময়দানে আছে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা একমত না-ও হতে পারেন। এখনও এর সবটা স্পষ্ট নয়। এমনও হতে পারে প্রতিরোধ যুদ্ধে শামিল বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেবে, যাতে কূটনৈতিক লড়াইটা ইজরায়েলের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে।
এখনও অফিসিয়ালি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা হয়নি৷ খুব বড় কিছু পরিবর্তন না হলে হয়তো খুব দ্রুতই ঘোষণা হবে। কাতার জানিয়েছে, প্রথমে চারদিনের জন্য যুদ্ধবিরতি হলেও পরে এর মেয়াদ বাড়তে পারে। ইজরায়েল বলেছে, ১০ জন যুদ্ধবন্দির মুক্তির বিনিময়ে তারা একদিন করে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াবে।
এই যুদ্ধে কিছু আশ্চর্য ঘটনা ঘটছে মধ্যপ্রাচ্যে। সংঘর্ষটাকে পশ্চিমের মিডিয়া যেভাবে মুসলিম বনাম ইহুদি বলে চালাতে চাইছে, বিষয়টি আদপেই তেমন নয়। গোটা পৃথিবীতে জায়নবাদ বিরোধী ইহুদিরা রাস্তায় নেমে এসেছেন তো বটেই। সে কথা বাদই দিলাম। সম্প্রতি লেবাননের খ্রিস্টান অভিনেতা রুডনি এল হাদ্দাদ সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লার কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তারা যেমন মা ফতিমার নামে ইজরায়েলের দিকে মিসাইল আক্রমণ করে, তেমনই ভার্জিন মেরির নাম নিয়েও করুক। তাহলে তাঁর মতো আরব খ্রিস্টানরাও এই প্রতিরোধ যুদ্ধের সঙ্গে একাত্মবোধ করতে পারবেন৷ হিজবুল্লা এই আবেদনে সাড়া দিয়ে ভার্জিন মেরি বা মারিয়ম আল মুকাদ্দাসার নামে মিসাইল ছুঁড়েছে। মনে পড়ছিল ফিলিস্তিনের মার্কসবাদী গেরিলা বাহিনী পিএফএলপি-র প্রতিষ্ঠাতা জর্জ হাবাসের কথা, যিনি ছিলেন একজন আরব খ্রিস্টান। মনে পড়ছিল এই লেবাননের মাটিতে দাঁড়িয়ে ইজরায়েলের দিকে পাথর ছুঁড়েছিলেন আরও এক আরব খ্রিস্টান এডোয়ার্ড সাঈদ। মনে পড়ছিল একাধিকবার নোয়ান চমস্কি দেখা করেছেন হিজবুল্লার নেতৃত্বের সঙ্গে। মতাদর্শের ফারাক, ধর্মের ফারাক ছাপিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের সাম্রাজ্যবাদ, জায়নবাদ বিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ।
যুদ্ধবিরতি সম্ভবত হচ্ছেই৷ এটাই সবচেয়ে আনন্দের কথা। যুদ্ধবিরতি হলে গাজায় ত্রাণ নিয়ে ঢুকবে একটার পর একটা ট্রাক। আপাতত এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কিছু নেই।