Business

Games

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে হেনস্তা করাটাও নারী নির্জাতন

 সমাজ বদলের আগে নিজেকে বদলান। মনে দ্বেষ পুষে রেখে দেশ বদল হয় না

রাত তখন ১২টার মত বাজে। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে শান্তিপূর্ণভাবে রাত দখল চলছে। অজস্র সাধারণ মানুষের ভিড়ে রয়েছেন বেশ কিছু রুপোলি পর্দার মানুষ। তাঁরা কেউ কোনও অসাধারণত্ব দাবি করেননি। রয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যম। এমন সময়ে শ্যামবাজারে পৌঁছন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। না, তাঁকে কেউ আমন্ত্রণ জানায়নি। তাঁর মনে হয়েছে আসবেন, এসেছিলেন। সম্প্রতি শঙ্খ বাজানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট ট্রোলিংয়ের শিকার হয়েছেন। সেই সব থেকে বের হয়েই এসেছিলেন, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, একজন নারী হিসেবে। শ্যামবাজারেই আসতে চেয়েছিলেন। এই ধরণের জমায়েতে পুলিশের পক্ষে আলাদা করে কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না মাথায় রেখেই এসেছিলেন। কোনও নিরাপত্তা চাননিও। ওখানে উপস্থিত আমরা কয়েকজন নিজেরাই ওঁকে একটু ধাক্কাধাক্কি থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। আবার বলছি, তাঁর অনুরোধে নয়। নিজেরাই। এর পরের ঘটনাক্রম কিন্তু 'সাধারণ' নয়। শুনুন:

একটা জায়গায় মোমবাতি জ্বালানোর পরে একটু এগিয়ে ঋতুপর্ণা আরেকটি জায়গায় মোমবাতি জ্বালাতে গেলেন। হঠাৎ করেই এক দল মানুষ অধৈর্য হয়ে 'গো-ব্যাক' স্লোগান দিতে শুরু করলেন। শুরুতে ইতস্তত করেও স্লোগানের তীব্রতা বাড়তে দেখে সেখান থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন ঋতুপর্ণা। ব্যাপারটা যদি এই পর্যন্ত হয়ে থেমে যেত, তাহলে কিচ্ছু বলার ছিল না। এই লেখার প্রয়োজনই হত না। কিন্তু, তার পরে কী ঘটল! গো-ব্যাক স্লোগান দিতে দিতে উত্তেজিত জনতা শ্রেণি যারা নাকি 'সুশীল নাগরিক সমাজ'-এর অংশ, তারা ঋতুপর্ণাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহের চেষ্টা করতে থাকেন এবং মারমুখী হয়ে ওঠেন। ঘটনার আকস্মিকতায় ওইখানে উপস্থিত আমরা সবাই বেশ হকচকিয়ে যাই। উত্তেজিত জনতা স্লোগান দেওয়ার পরেও প্রথম যেখানে মোমবাতি জ্বালিয়েছিলেন সেইখানে এসে মাটিতে বসেন ঋতুদি। নিপাট উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর শহরের মানুষ গুলোর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো।
আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করে ঋতুদিকে ওই জায়গা থেকে ঠিকভাবে বার করে নিয়ে যেতে পারি। প্রত্যেকের নাম এখানে মেনশন করছি। আমার অনুজ সাংবাদিক রাকেশ Rex Naskar III, অভিনেতা ভ্রাতৃপ্রতিম Rishav Basu, Rishav-এর টিমের এক বোন, অভিনেত্রী Ratasree Dutta, শিল্প নির্দেশক Amit Chatterjee এবং ঋতুদির ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী #Rahul Das. ঋতুদি বসে থাকাকালীন হঠাৎ আমাকে আর রাকেশকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় বেশ কয়েকজন। আমি প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ি ওঁর ঘাড়ের কাছে গিয়ে। আমি যখন উঠতে যাই, মারমুখী জনতার মধ্যে থেকে দু-তিনজন কনুই দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশ কয়েকবার জোরে আঘাত করে আমার ডান দিকের চোয়ালে, যেটা এখনও রীতিমতো ফুলে আছে। রাতাশ্রী চোট পায়। স্থানীয় একজনের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক সুশ্রুষা করতে হয়। সে এখনও ট্রমায়। রাকেশের পা মাড়িয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়, ফলশ্রুতি তার যথেষ্ট শক্ত জুতোর একটা অংশ ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়। কয়েকজন ইচ্ছাকৃতভাবে জলের বোতল দিয়ে বারবার সজোরে আঘাত করতে থাকেন আমার মাথার পেছনে। একজন রীতিমত পিছন থেকে টিপে ধরেন গলাও। রাহুল, ঋষভ, রাকেশ আর আমার পিঠে কত যে কিল, ঘুসি পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। উদ্দেশ্য ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে আঘাত করা! এরপরে কোনও রকমে ঋতুপর্ণাকে নিয়ে গিয়ে বসানো হল গাড়িতে। এবার সেই জনতার একাংশ চড়াও হল গাড়ি ভাঙচুর করার উদ্দেশ্য নিয়ে। গাড়ির কাচে অনবরত আঘাত চলতে থাকে। কয়েকজন মহিলা এসে নিজেদের ব্যাগ এবং বিভিন্ন জিনিস দিয়ে গাড়ির কাচে আঘাত করতে থাকেন। গাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েও ঋতুপর্ণা তাদের বোঝাবার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন যে তিনি সবার সঙ্গে একসাথে বিচারের দাবি জানাতে এসেছেন। কে শোনে কার কথা! স্লোগান এবং অসভ্যতা চলতে থাকল।
এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে অসামাজিকতার অবকাশ থেকেই যাচ্ছে এই সমাবেশ গুলোতে। কাল সেটারই পরিস্ফুরণ হল, আমার মনে হয়। প্রতিবাদের মোটিভ না বুঝেই প্রতিবাদে সামিল হওয়ার থেকে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করতে পথে নেমে কখনও নৈরাজ্যকে হাতিয়ার করা চলে না। যারা পথে নামলেন নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে, তারা একজন নারীকে হেনস্থা করবার আগে দু'বার ভাববেন না? এতে কলঙ্কিত হয় সমাবেশ, বিপ্লব। সমাজ বদলের আগে নিজেকে বদলান। মনে দ্বেষ পুষে রেখে দেশ বদল হয় না।
অনেকেই বলছেন, ঋতুপর্ণা আজকে এখানে এলেন কেন! আমি বলব, একদম ঠিক করেছেন। শ্যামবাজারে যেখানে সেই নারকীয় ঘটনা ঘটেছে, সেখানেই এক রাতে তিনি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, মা হিসেবে এসেছেন নারীর মর্যাদার লড়াইয়ে সামিল হতে। হায় রে, আমার কলকাতার নাগরিক সমাজ তাঁকে সেই মর্যাদাটুকু দিতে পারল না।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর শাঁখ বাজানোর ঘটনা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে, মানুষের ফেক মনে হয়েছে এবং সেই জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট ট্রোল করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সমাজের কোনও ক্ষতি করেননি তো! বরং ধর্নার নামে একাধিক রাজনৈতিক নেতা যারা বিভিন্ন মঞ্চে বসে থাকছেন তারা দস্তুর মত সমাজের ক্ষতি করে চলেছেন। সঠিক শত্রু চিনতে শিখুন। যে সব মানুষের উস্কানিতে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেন কিছু 'কোট আনকোট' সাধারণ মানুষ, তারা মনে রাখবেন একটা শ্রেণি কিন্তু দিনের শেষে নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছাতে ব্যস্ত।
ধর্ষকরা মিছিলে হেঁটে বেড়াচ্ছে, তাদের সঙ্গে সেলফিও তুলে ফেলছেন, ঠিক আছে। কিন্তু ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে যে আচরণ করা হল সেটা অন্যায়, অসভ্যতা এবং অসাংবিধানিক। কারণ তিনি অপরাধী নন যে একজন নারী হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে তিনি বিচারের দাবিতে পথে নামতে পারবেন না। তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক নেতার মত তিনি জেল খাটা আসামি নন, তিনি দিনের শেষে একজন শিল্পী।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর গাড়ি ওখান থেকে চলে যাওয়ার পর ফিরে আসার সময় মহিলাদের একটি দল রীতিমত আমাকে ঘিরে ধরে উত্তেজিত ভাবে প্রশ্ন করতে থাকেন কেন আমি ঋতুপর্ণাকে বাঁচাচ্ছিলাম! বিশ্বাস করুন, আশ্চর্য হয়ে গেছি আমি! আমি জানিনা তাদেরকে এই সাহস কে দিয়েছে একজনকে শারীরিক নিগ্রহ করতে চেষ্টা করার এবং নজিরবিহীন এই অসভ্যতা করার। তবে আবার বলছি, রাজনৈতিক মদত ছাড়া এই হুলিগানিজম্ সম্ভব নয়।
যাঁরা শুরু থেকে এই আন্দোলনকে বিপথগামী হওয়া থেকে বুক দিয়ে আগলেছেন, তাঁদের প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা। Sudipta Chakraborty, Sharmistha Goswami Chatterjee, Debjani Laha Ghosh এবং আরও অনেকের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন, কাদের নিয়ে পথে নামছি! বাঙালির জনজাগরণ দেখতে দেখতে আবেগে ভেসে কোনও ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো? কোনও মদতপুষ্ট হাতে স্টিয়ারিং ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তো! কোনও ভুল কথা বলে থাকলে ক্ষমা করবেন।
Rituparna Sengupta দি, ক্ষমা চাইছি তোমার কাছেও।
নিজেদের ভাগে রইল, ছিঃ। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ যদি না হয় তবে বলতে বাধ্য হব যে আপনারা নারীর মর্যাদার লড়াই করছেন না, তিলোত্তমাকে নিয়ে রাজনীতি করছেন।
©️
অতনু রায়

সত্যিই শাসক এবার শঙ্কিত, সন্ত্রস্ত। জারি হল কার্লাইল অ্যাক্ট ।

১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মতলবে বঙ্গ বিভাজনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ব্রিটিশ সরকার। তার আগে থেকেই রবীন্দ্রনাথ, আনন্দমোহন বসু, মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সহ স্বনামধন্য মানুষেরা বঙ্গ বিভাজনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলনে ব্যাপক সংখ্যায় অংশগ্রহণ করে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা। তরুণদের আবেগপূর্ণ অংশগ্রহণে প্রমাদ গোনে শাসক শ্রেণী। বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিন ছয়েক আগে, ১০ অক্টোবর, মুখ্যসচিব আর ডাব্লিউ কার্লাইল জেলা শাসকদের উদ্দেশ্যে একটি গোপন সার্কুলার পাঠান। তাতে বলা হয় স্বদেশী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ যেকোন মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। সেই সার্কুলারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ছাত্রসমাজ দ্বিগুণ উৎসাহে পথে নামে। যথারীতি সাম্রাজ্যবাদী শাসকের দাঁত-নখ তীক্ষ্ণ হয়। পুলিশি দমন-পীড়নের পাশাপাশি ছাত্রনেতাদের স্কুল-কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। রিপন কলেজের স্নাতক স্তরের ছাত্র শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু গড়ে তোলেন অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি। বহিষ্কৃত ছাত্রদের শিক্ষালাভের বিকল্প সুযোগ করে দেয় ওই সোসাইটি। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯০৬ সালের ১৪ই আগস্ট গঠিত হয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ। উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখ।

এতদিন পরে ফের সেই কার্লাইল সার্কুলারের প্রত্যাবর্তন ঘটল তথাকথিত মা-মাটি-মানুষের সরকারের হাত ধরে। আর জি কর হাসপাতালের নারকীয় ঘটনায় যুক্ত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ আজ পথে নেমেছেন। অভূতপূর্ব জনজাগরণ ঘটেছে সারা রাজ্য তথা দেশে, এমনকি প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে বিদেশেও। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও প্রতিদিন ব্যাপক সংখ্যায় পথে নেমে দৃপ্ত কন্ঠে প্রতিবাদ ধ্বনিত করছে। এই অবস্থায় গতকাল, ২৩ আগস্ট, রাজ্যের মুখ্যসচিব একটি সার্কুলার পাঠিয়েছেন জেলা শাসকদের কাছে। তার মূল কথাটি হল, প্রতিবাদী আন্দোলনে স্কুল পড়ুয়াদের অংশগ্রহণ বরদাস্ত করা হবে না!(আনন্দবাজার,২৪ আগস্ট ২০২৪)

এখন প্রশ্ন হল, গদি হারানোর ভয়ে সন্ত্রস্ত শাসকের এই সার্কুলার ছাত্রসমাজ বরদাস্ত করবে তো? ছাত্রদের দিকে তাকিয়েই তো বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম একদিন বলেছিলেন, "আমরা শক্তি আমরা বল/ আমরা ছাত্রদল!" নেতাজি বলেছিলেন, "মনুষত্ব লাভের একমাত্র উপায় মনুষ্যত্ব বিকাশের সকল অন্তরায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করা। যেখানে যখন অত্যাচার ও অনাচার দেখিবে সেখানে নির্ভীক হৃদয়ে শির উন্নত করিয়া প্রতিবাদ করিবে এবং নিবারণের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিবে।"(নূতনের সন্ধানে) সর্বোপরি মাথার উপরে রয়েছেন চিরভাস্বর রবি। সবুজের অভিযান কবিতায় তিনি বলেছেন --
"তোরে হেথায় করবে সবাই মানা।
হঠাৎ আলো দেখবে যখন
ভাববে একি বিষম কান্ডখানা।
সংঘাতে তোর উঠবে ওরা রেগে,
শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে,
সেই সুযোগে ঘুমের থেকে জেগে
লাগবে লড়াই মিথ্যা এবং সাঁচায়।
আই প্রচন্ড, আয় রে আমার কাঁচা।"
✍️
চন্দ্রপ্রকাশ সরকার
২৪ আগস্ট ২০২৪

ড্যাম দিয়ে দিল্লীর পানি আটকাবেন! বাংলাদেশের ভূগোল আপনি বুঝেনতো?

     ড্যাম দিয়ে দিল্লীর পানি আটকানো কোন প্র্যাকটিকাল সলিউশন নয়। কারণ বাংলাদেশ সমতল ভূমি, ড্যামের জন্য যে পাহাড়ি এলাকা লাগে ন্যাচারাল ব্যরিয়ারের জন্য তা নেই, পিলারের জন্য যে পাথর লাগে তা মাটির ২০০ ফুট নীচে ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ প্র্যাক্টিক্যাল প্রবলেম আছে।

পানি উপর থেকে নীচে প্রবাহিত হয়। নদীগুলো যখন ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তখন ভারতে পড়েছে নদীর আপার স্ট্রিম, আর আমরা পেয়েছি লোয়ার স্ট্রিম। লোয়ার স্ট্রিমে ড্যাম দিয়ে আপার স্ট্রিমের ড্যাম খুলে ছেড়ে দেয়া পানিকে আটকানো কোনো প্র্যাক্টিক্যাল সলিউশান না।
কেউ কেউ আবার বলছে বাংলাদেশ ৭,৫০০ ফুট উঁচু ড্যাম দিবে। তারা কী জানে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ড্যামের উচ্চতা কেবল ১,০০১ ফুট। যা চীনের জিনপিং-১ ড্যাম। আমেরিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল আর উচু ড্যামের উচ্চতা ৭৭০ ফিট।
বন্যা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর আর সম্ভাব্য উপায় হলো ভারতের সাথে বসে একটা সলিউশনে আসা। কিন্তু ভারত তো ভারত। তারা খালি নিতে জানে, দিতে না। তারা বিভিন্ন নদীগুলোর পানি ডাইভার্ট করে আমাদের নদীগুলোকে হয় শুকিয়ে মারছে, আর না হয় নিজেদের প্রয়োজনে বিনা ওয়ার্নিং এ ড্যামের গেইট খুলে দিয়ে ডুবিয়ে মারছে। যা চরম অসভ্যতা। পানি শেয়ারে যে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী আছে, তা তারা মনে না। কোন একটা প্রতিবেশির সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক নেই। যারা ভাবছেন ভালো প্রতিবেশী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা একদিন না একদিন বুঝতে পারবে, আমার মতে পারবে না। ভালো প্রতিবেশী হওয়া তাদের ইচ্ছাতেও নেই, আদতেও নেই।
ভারত কখনোই বাংলাদেশকে তাদের ন্যায্য পানি দেয় না। এর জন্য কোর্ট কাচারি করে চাপ সৃষ্টি করা গেলেও তারা এতেই নমনীয় হয়ে সুড়সুড় করে আমাদের ন্যায্য পানি আমাদের দিবে বলে বলে মনে করি না। বাস্তবে তারা কোন কোর্টের রায় মানবে না। এবার সেটা জাতিসংঘ হোক কী আইসিজে বা অন্য কোনো।
এই ব্যাপারে ভারতকে অন্য ভাবে চাপে ফেলতে হবে। একদিকে চীন, নেপাল, ভুটান যারা ভারতের আপার স্ট্রিমে আছে তাদের সাথে নিয়ে নদী চুক্তিতে যেতে হবে। অপরদিকে ভারত স্থল আর নৌ পথে আমাদের যেসব ট্রানসিট ব্যবহার করে সেগুলো বন্ধ করে ভারতকে পানির সুষম বণ্টনে নেগোশিয়েট করতে বাধ্য করতে হবে।
অপর দিকে, আমাদের নদীগুলো কিভাবে এই বাড়তি পানির চাপ নিয়ে পানি সরিয়ে সাগরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেলতে পারবে তার বিকল্প আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। জলবায়ুর কারণে সারা বিশ্বে বৃষ্টি, জলোচ্ছাস, খরা, বন্যা , সমুদ্রের লেভেল ইত্যাদি বেড়ে গেছে। এসব প্রতিরোধে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে, সেমিনার হচ্ছে, সেসব এটেন্ড করে বিভিন্ন উপায়ে শিখে এসে দেশে তা প্রয়োগ করতে হবে। দেশে বিদেশে আমাদের নিজেদের প্রচুর এক্সপার্ট আছে, তাদের নিয়ে একটা এক্সপার্ট গ্রুপ বানিয়ে খুব দ্রুততার সাথে সলিউশনের দিকে আগাতে হবে।
ছবি চীনের থ্রী গর্জেস ড্যাম

ভারতকে পানি বণ্টন আর নিয়ন্ত্রণের জন্য রেগুলার মিটিং করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে। ভারতের সাথে যে কোনো দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে কেবল এডমিনিস্ট্রেশনের লোক নয় , টেকনিক্যাল এক্সপার্টদেরও পাঠাতে হবে, যাতে তারা ভারতীয় এক্সপার্টদের ভূজুং ভাজং করণগুলোকে নিজেদের লজিক আর কারণ সহ মোকাবেলা করতে পারে। আমাদের ভাষাগত দুর্বলতার কারণে বেশিরভাগ সময়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাগুলোতে ভারতীয় টিম ডমিনেট করে, এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশি টিম মেম্বারদের ইংরেজি ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ আর বোল্ড হতে হবে যাতে তারা মিটিংগুলোতে চুপ না থাকে। মোট কথা ভারতের স্ট্রং ম্যান ট্যাক্টিককে আমাদের স্ট্রং ম্যানেরা গিয়ে শক্ত ভাবে মোকাবেলা করবে।
আর আমাদের দেশে বিভিন্নভাবে ভারতের যে অগাথ বিচরণ, তাকে ল্যাভরেজ হিসাবে ফেলে ভারতের হাত টুইস্ট করতে হবে। আগের মতন কেবল দিয়েই যাবো না। আমাদের থেকে কিছু চাইলে আমাদেরকেও কিছু দিতে হবে। যতদিন দিবে, ততদিন পাবে। সমানে সমান ডিল হবে।

"আমার কিছু স্বপ্ন আছে। গাজা যুদ্ধ স্থল থেকে ফরিদা

"আমার কিছু স্বপ্ন আছে। আমার পরিবার এবং বন্ধুদের একটি বিশাল বৃত্ত রয়েছে। জীবনটা ভারী সুন্দর। আমরা যখন মরে যাব, তখন কী ঘটছিল সে সম্পর্কে কেউ কিছুই জানবে না। দয়া করে আমি যা বলছি তা লিখে রাখুন। আমি আমার কথা পুরো বিশ্বকে জানাতে চাই। কারণ আমি কেবল একটি সংখ্যা নই,” বলেছিলেন ফরিদা। গাজা সিটির বাসিন্দা বছর ২৬-এর ফরিদা ইংরেজি পড়ান। অক্টোবরে তিনি তাঁর প্রথম মেসেজে লিখেছিলেন, "আমার পাশের তিনটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমাদের সবাইকে এখান থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে কিন্তু কোথায় যাব জানি না। আমরা শুধু অপেক্ষা করছি। আমার অনেক বন্ধু নিখোঁজ, হয়তো মারা গিয়েছে। এমনকি আমার বাবা-মায়ের কথাও জানি না।”


গতবছরের অক্টোবর মাসে ফরিদা তাঁর ছয় সন্তান আর ভাইবোনদের নিয়ে দক্ষিণ গাজার দিকে পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাঁরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হাঁটছিলেন আর রাস্তাতেই ঘুমোচ্ছিলেন। তাঁরা ওয়াদী গাজার সেই অংশে যেতে চাইছিলেন, যেই অংশটা ইসরায়েল সুরক্ষিত বলে জানিয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছু দিন রাস্তায় কাটানোর পর তাঁরা বুঝতে পারেন কোথাওই তাঁরা নিরাপদ নন। শেষপর্যন্ত উত্তর গাজায় পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। "আমরা দক্ষিণে থাকার কোনও জায়গা পাইনি। সামান্য প্রয়োজনের জিনিসও আমাদের কাছে ছিল না। আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ চলছিল। নিজেদের সম্মান রক্ষার খাতিরে অন্তত আমরা ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চারপাশে কী ঘটছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমাদের চারপাশে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ হচ্ছে আর বাচ্চারা কেঁদেই চলেছে। কোথায় যাব আমরা জানি না। গাজায় রাতেও আপনি জানেন না পরদিন সকাল পর্যন্ত বাঁচবেন কি না। দিনে যদি চার-পাঁচ মিনিটও শান্তিতে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারি তাহলে আমরা খুবই খুশি হয়ে যাই। আমি এখন হিজাব পরে আমার পরিবারের সঙ্গে বসে আছি। আকাশপথে যে কোনও বোমা হামলার মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।” শেষবারের মত জানিয়েছিলেন ফরিদা। উত্তর গাজায় ফিরে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই বোমা হামলায় তাদের বাড়ির একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ধ্বংস হয়ে যায় রাস্তা।
যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস আগে আব্দেলহাকিম সফটওয়্যারে ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। যুদ্ধে তাঁদের আশ্রয়স্থল মধ্য গাজার আল বুরেইজ শরণার্থী শিবির। তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালে বিস্ফোরণের সময় তাঁর অনেক বন্ধু সেখানে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন আহত হন আর অন্যজনের পুরো পরিবার মারা যায়। ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় রেকর্ড করা ভিডিওতে তিনি বলছিলেন, “আমার বয়স ২৩ বছর। আমি এখনও পর্যন্ত বেঁচে আছি। জানি না আমার কাহিনী প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকব কি না। যে কোনও সময়ে, আমি জঙ্গি বিমানের শিকার হতে পারি। আমরা সবাই বসে ছিলাম যখন হঠাৎ একটি রকেট বাড়িতে পড়ে। আশ্চর্যজনক ভাবে আমি এবং আমার পরিবার বেঁচে গেছি। আমরা অনেক কষ্টে বার হতে পারলেও আমাদের প্রতিবেশীরা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। আমরা তাদের খুঁজতে গিয়েছিলাম, কিন্তু কাউকে পাইনি। বাড়ির কিছু অংশ ঠিক করছি যাতে আমরা এখানে থাকতে পারি আর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে পারি। প্রতি মিনিটে, প্রতি ঘন্টায় আমরা মৃত্যুর ঘেরাটোপের মধ্যে বেঁচে আছি। আমাদের কাছে জল নেই। ওষুধ, বিদ্যুৎ বা অন্য কোনও প্রয়োজনীয় জিনিস নেই। ভাই-বোনদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া এক টুকরো রুটি ছাড়া, আমি তিন দিন ধরে কিছুই খাইনি। গত ১২ দিনে আমি এবং আমার পরিবার ১০ ঘণ্টাও ঘুমাইনি। আমরা খুব ক্লান্ত। উদ্বেগের কারণে আমরা বিশ্রামও নিতে পারছি না। সাহায্যের জন্য আমি কিছুই করতে পারিনি। চারপাশে শরীরের টুকরো দেখে কেমন যেন স্থবির হয়ে গিয়েছিলাম। এখানে কেউ নিরাপদ নয়, আমরা সবাই শহীদ হতে চলেছি।"
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও আব্দেল হাকিম সাহায্য করে চলেছেন অন্যদের। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে নিয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে ত্রাণ বিতরণ করছেন। তিনি বলছেন, "আমরা ত্রাণ সামগ্রী এবং কম্বল প্রস্তুত করছি। শিশুরাও সাহায্য করছে। মিশর থেকে ট্রাক আসার জন্য অপেক্ষা না করে আমরা নিজেরাই উদ্যোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
খালিদ উত্তর গাজার জাবালিয়ায় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবারহ করেন। আকাশপথে বিলি করা সতর্ক-বার্তাবাহী প্রচারপত্র পাওয়ার পরও খালিদ কিন্তু তাঁর পরিবারের সঙ্গে অন্যত্র যেতে রাজি হননি। অক্টোবরে একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছিলেন, “কোথায় যাব আমরা? কোনও স্থানই সুরক্ষিত নয়। সর্বত্র একই অবস্থা। যে কোনও পরিস্থিতিতেই আমরা মরব।” তিনি যখন মেসেজটি পাঠাচ্ছিলেন, পিছনে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল। খালিদ তাঁর নিকট আত্মীয়ের দু’জন ছোট শিশুরও দেখাশোনা করেন। পাশের বাজারে হওয়া হামলায় বেঁচে গিয়েছিল ওই দু’জন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি চিকিৎসা সরঞ্জাম যে বিক্রি করতে পারছেন না, সে কথাও খালিদ জানিয়েছেন। “আহত মানুষের সংখ্যা বিপুল এবং সেই কারণে ওষুধের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। কিছু ওষুধ কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, অথচ ওগুলো জরুরি ওষুধ ছিল।"
খালিদের সাথে শেষ যোগাযোগ হয়েছিল অক্টোবরে। সে জানিয়েছিল - “ওরা ক্রমাগত আমাদের উপর বোমাবর্ষণ করছে এবং আমরা জানি না কখন রুটি আনতে বাইরে যেতে পারব। খাবার সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ নেই। আমরা নষ্ট খাবার,পচে যাওয়া টমেটো খাচ্ছি। ফুলকপি থেকে পোকামাকড় বেরিয়ে আসছে। এটি খাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই কারণ অন্য কিছুই নেই। পচে যাওয়া অংশগুলো ফেলে দিয়ে বাকিটাই খেতে হবে।" নিরুপায় ভাবে তার আর্তি ছিল "আমি যাচ্ছি না। এখন আমরা ভাবছি, হে আল্লাহ, পরবর্তী বোমা কখন পড়বে যাতে আমরা সবাই মরতে পারি এবং শান্তি পাই।" ৩১শে অক্টোবর তিনি যে অঞ্চলে থাকতেন, সেই জাবালিয়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর থেকে আর যোগাযোগ করা যায়নি তার সাথে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই হামলায় ১০১ জন নিহত ও ৩৮২ জন আহত হয়েছেন।
গাজার খান ইউনিসে বসবাসরত যুবক অ্যাডাম একদিনে পঞ্চমবারের মতো নিরাপদ স্থানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নভেম্বরে। পেশায় শ্রমিক ওই যুবক বলেছিলেন, “গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে দক্ষিণে চলে যেতে বলা হয়েছে, বিশেষত খান ইউনিসে। তবে খান ইউনিসেও বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। একটা বোমা তো আমার বাড়ির কাছে পড়েছিল।” ইসরায়েল গাজাকে সম্পূর্ণ অবরোধ করার পর খাদ্য, ওষুধ ও পেট্রোল দ্রুত কমে এসেছে। পার্কিনসনস রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবার যত্ন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিও অ্যাডাম পাচ্ছেন না। এমনকি হাসপাতালেও কোনও শয্যা পাননি তিনি। আগের রাতে তাঁকে একটি হাসপাতাল চত্বরের মেঝেতে ঘুমোতে হয়েছিল। পরিবারের জন্য প্রতিদিন খাবার খোঁজার লড়াইয়ে শামিল অ্যাডাম বলেছেন, "লাইনে না দাঁড়িয়ে খাবার পেতে আমাকে প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। যখন আপনাকে স্কুল প্রাঙ্গণে ঘুমোতে হয়, তখন আপনার ভিতরে একটা ভাঙন ধরে। যখন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঘুমোতে হয়, তখন আপনার ভেতরে কিছু একটা ভেঙ্গে যায় বৈকি। রুটির জন্য লাইনে দাঁড়ালে অথবা জলের জন্য কাকুতি মিনতি করার সময়ও তীব্র ভাঙন ধরে।” শেষ বার্তায় সে বলেছিল, “আমি আপনাদের এই পুরো ঘটনাটি জানিয়ে রাখতে চাই, যাতে এটা নথি হিসাবে থেকে যায়, যাতে বিশ্ব চিরকাল লজ্জা বোধ করে যে আমাদের সঙ্গে যা হল, তারা সেটা ঘটতে দিয়েছে।”
বছর পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধ চলছে। মিশর সংলগ্ন রাফাহ সীমান্তে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলিকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে যে পরিমাণ পণ্য আসছে তা গাজার বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই নয়। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪ লাখেরও বেশি মানুষকে তাঁদের ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে। প্রথম চার সপ্তাহে ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে চার হাজারেরও বেশি শিশু।
ফরিদা, অ্যাডাম, খালিদ, আব্দেলহাকিম এখনো বেঁচে আছেন কি না, জানি না। এই নারীঘাতি, শিশুঘাতি যুদ্ধের শেষও অজানা। শুধু জানি, গল্প হয়ে থেকে যাবে ঘটনাগুলো। ফরিদার অপূরিত স্বপ্ন রয়ে যাবে আমাদেরই কারও বুকে। মুক্তির অবিচল লক্ষ্যে এগিয়ে চলা হাজার হাজার সেনানী একদিন জবাব চাইবে ঠিকই। শুরু হবে সব যুদ্ধের অবসানের যুদ্ধ। আকাশে সেদিন আর বিমানের কালো ধোঁয়া উড়বে না। নীল আকাশটা আরও নীল হয়ে যাবে তারপর থেকে।
কৃতজ্ঞতা :গৌরব ঘোষ

ব্রিটানিয়া বিস্কুটকারাখানা বন্ধ , চাহিদা নেই একথা তো বলা যাচ্ছে না।

 দাদু খায়..... নাতি খায় ....


মনে পড়ে শৈশবে দেখা এই বিজ্ঞাপনের কথা?
থিন এরারুট নয় দোকানে গিয়ে বলতাম ব্রিটানিয়া বিস্কুট দাও তো ! জনপ্রিয় ঐ বিস্কুটের বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন ছিল দাদু ও নাতি। তাঁরা হয়তো বেঁচে থাকবে, কিন্তু কলকাতার বুক থেকে হারিয়ে গেলো দেশের প্রথম আধুনিক বিস্কুট কারখানা।
শুরুটা 1892 সালে, কলকাতায় একদল ব্রিটিশ ব্যবসায়ী মাত্র 295 টাকা দিয়ে বিস্কুট তৈরি শুরু করেছিলেন । প্রথমদিকে মধ্য কলকাতার একটি ছোট বাড়িতে বিস্কুট তৈরি করা হত। সংস্থাটি পরে গুপ্ত ব্রাদার্স কিনে নেয় , যার প্রধান ছিলেন নলিন চন্দ্র গুপ্ত । তিনি ভিএস ব্রাদার্স নাম দিয়ে উদ্যোগটি শুরু করেছিলেন । 1910 সালে এদেশে প্রথম ঐ কোম্পানি মেশিন দিয়ে বিস্কুট তৈরি শুরু করে ।
1918 সালে, কলকাতায় বসবাসকারী একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী সিএইচ হোমস এতে অংশীদার হিসেবে যোগ দেন। কোম্পানির নাম হয় ব্রিটানিয়া বিস্কুট কোম্পানি লিমিটেড। মুম্বই কারখানাটি 1924 সালে স্থাপিত হয়েছিল এবং লন্ডনের পিক ফ্রান্স নামে একটি বিস্কুট কোম্পানি বিবিসিও-তে নিয়ন্ত্রণকারী অংশ কিনে নেয়। এর পরেই ব্রিটানিয়া বিস্কুট জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় , ব্রিটানিয়া মিত্রশক্তির সৈন্যদের সরবরাহের জন্য সেই সময়ের সবচেয়ে বড় অর্ডার পেয়েছিল । সেই অর্ডার কোম্পানির বার্ষিক বিক্রয়কে 8 শতাংশ বাড়িয়ে 1.36 কোটিতে পৌঁছে দেয়।
1979 সালে কোম্পানির নাম ব্রিটানিয়া বিস্কুট কোম্পানি লিমিটেড থেকে ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড করা হয় । 1982 সালে , একটি আমেরিকান কোম্পানী, Nebisco Brands Inc. পিক ফ্রান্সিসের কাছ থেকে একটি অংশ কিনে নেয় এবং ব্রিটানিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার হয়ে ওঠে । আর 1983 সালে , কোম্পানির বিক্রয় 100 কোটি ছুঁয়ে ফেলে। 1989 সালে ব্রিটানিয়া তার হেড অফিস কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে সরিয়ে নেয়।
ব্রিটানিয়ার বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন মহম্মদ আলী জিন্নাহর নাতি নাসলি ওয়াদিয়া, বম্বে ডাইং এর মালিক এবং এমডি বরুণ বেরি। নাসলি ওয়াদিয়ার ছেলে নেস ওয়াদিয়া হলেন এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর। এছাড়া প্রাক্তন RBI গভর্নর উর্জিত প্যাটেল কোম্পানির একজন নন-এক্সিকিউটিভ স্বাধীন পরিচালক। কোম্পানির পরিচালনা নিয়ে ওয়াদিয়াদের সাথে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী বিস্কুট কিং রাজন পিল্লাইয়ের ভয়ঙ্কর বোর্ডরুম লড়াইয়ের সাক্ষী নব্বইয়ের দশক। রহস্যজনক ভাবে তিহার জেলে পিল্লাইয়ের মৃত্যু ইতি টানে সেই যুদ্ধের।‌🛑
উত্তর আমেরিকা , ইউরোপ , আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় 60 টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করা হয় ব্রিটানিয়ার পণ্য। ভারতে রয়েছে তাদের 50 লাখেরও বেশি খুচরা আউটলেট । সংগঠিত রুটির বাজারে ব্রিটানিয়া ব্রেড আজ সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড। সুতরাং চাহিদা নেই একথা তো বলা যাচ্ছে না। এতোদিন ব্রিটানিয়ার ভারতে ১৩টি কারখানা ছিলো । তাহলে অশুভ বলেই কি বন্ধ করে দেয়া হলো বছরে আড়াই হাজার টন বিস্কুট উৎপাদনকারী কলকাতার প্রথম কারাখানাটি....? কে দেবে জবাব!
কলমে 🖌️ স্বপন সেন 🌲

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস কারা করেছে?

 নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের সত্যতা:




বঙ্গবিজেতা বখতিয়ার খিলজি মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী নিয়ে বঙ্গবিজয় করেছিলেন ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে ।
তখন বাংলায় সেন বংশের শাসক লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকাল। সেন বংশের শাসন নিম্নবর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধদের জন্য মোটেও সুখকর ছিলোনা । এরকমই পরিস্থিতিতে বখতিয়ার খিলজির আক্রমণ ঘটে আর লক্ষ্মণ সেন পালিয়ে যান। পরে এই আক্রমণের উপরেই ভিত্তি করে বহু ঐতিহাসিক মন মতো করে বখতিয়ার খিলজির উপর বেশ কিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছেন । তার মধ্যে মূল অভিযোগ হলো নালন্দা ধ্বংস।
যাইহোক বখতিয়ার খিলজির উপর বড়োজোর উদন্তপুরী আক্রমণের অভিযোগ চাপানো যায়, যেটা নালন্দা থেকে ১০ কিলোমিটার দূটে মগধে অবস্থিত । তার বেশি কিছু না। যদিও এই উদন্তপুরী আক্রমণ হয়েছিল ভুল তথ্যের কারণে । বখতিয়ার খিলজি উদন্তপুরীকে সেনা শিবির ভেবে আক্রমণ করেছিলেন।
তবে মজাদার বিষয় হলো বখতিয়ারকে উদন্তপুরী আক্রমণ করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো স্থানীয়রা । পণ্ডিত কুলাচার্য জ্ঞানানশ্রী তাঁর ‘ ভাদ্র কল্পদ্রুম’ এ লিখেন
❝ বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পণ্ডিতদের মধ্যে কলহ ও বিবাদ চলছিলো, তা এমনই তীব্র ছিলো যে তাদের এক পক্ষ তুর্কি আক্রমণকারীদেরকে তাদের ওখানে আক্রমণ চালাতে প্রতিনিধি পাঠায়।❞ [১]
এমনকি বখতিয়ার খিলজির হয়ে অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু নদীয়া আক্রমণের সময় গুপ্তচরবৃত্তিও করেছিল ।
যাইহোক ঐতিহাসিক মিনহাজের বিবরণে জানা যায় উদন্তপুরী একটা শিক্ষাপীঠ ছিলো।আর বখতিয়ার সেটা জানতেন না।
তবে আরো কথা আছে। এই মিনহাজের বিবরণটাও সন্দেহজনক। ড. দীনেশচন্দ্র সেনের মতে উদন্তপুরী বৌদ্ধবিহার ধ্বংস হয় ১১৯৩ সালে,অন্যান্য গনেষকদের মতে ১১৯১-৯৩ এর মধ্যে। আর বখতিয়ার খিলজি আক্রমণ ঘটে ১২০৪ সালে। আর এই মিনহাজের বিবরণকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বানোয়াটও বলেছেন। [৩]
এবার আসা যাক নালন্দা আক্রমণ নিয়ে । নালন্দা আক্রমণ নিয়ে বললে বলতে হয় বখতিয়ার খিলজি কখনো নালন্দাতেই যাননি ।
প্রফেসর ডি এন ঝাঁ তার বই Against The Grain: Notes On Identify তে বলেছেন বখতিয়ার খিলজি কখনো নালন্দায় যাননি।
গবেষক লেখক অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেন;
❝বখতিয়ারের বিরুদ্ধে নালন্দা মহাবিহার তথা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করার নিরঙ্কুশ অপবাদ বহুল প্রচারিত। কোনো কোনো ঐতিহাসিক লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি ১১০০ সালে বখতিয়ার খিলজি ধ্বংস করেছেন । ভারতীয় ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বখতিয়ারের এই আক্রমণের তারিখ জানিয়েছেন ১১০০ সাল। অথচ স্যার উলসলি হেগ বলছেন, বখতিয়ার ওদন্তপুরী আক্রমণ করেছেন ১১৯৩ সালে। আর স্যার যদুনাথ সরকার এই আক্রমণের সময়কাল বলছেন ১১৯৯ সাল । সবচাইতে মজার যে, বখতিয়ার খলজি বঙ্গ বিজয় করেন ১২০৪ সালের ১০ মে । স্যার যদুনাথ সরকার বখতিয়ারের বঙ্গ আক্রমণের সময়কাল বলছেন ১১৯৯ সাল। অন্যদিকে অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে বৌদ্ধদের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করা হয় ১১৯৩ সালে । যে লোকটি ১২০৪ সালে বঙ্গে প্রবেশ করেন, সে কীভাবে ১১৯৩ সালে নালন্দা ধ্বংস করেন ?❞[৪]
তাহলে দেখা যাচ্ছে বখতিয়ার খিলজির আক্রমণের আগেই নালন্দা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
তিনি আরো লিখেন ❝ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা যাচ্ছে, ধ্বংস করা তো দূরের কথা, বখতিয়ার নালন্দার ধারেকাছেই যাননি।❞[৫]
যদুনাথ সরকার অবশ্য চেষ্টা করেছেন বখতিয়ার খিলজির আক্রমণকে ১২০৪ থেকে পিছিয়ে ১১৯৯ আনার, কিন্তু তাতেও ধ্বংসের দায় তাঁর উপর চাপে না।
শরৎচন্দ্র দাশ তাঁর Antiquity of Chittagong প্রবন্ধে লিখেছেন, “বিক্রমশীলা ও ওদন্তপুরী বিহার দুটিকে ধ্বংস করা হয়েছিল ১২০২ সালে।”
এই তালিকায় কিন্তু নালন্দার উল্লেখ নেই।
লামা তারানাথ এবিষয়ে তার বই ‘ ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস’ (১৬০৮খ্রিঃ) - এ পরিস্কারভাবে বলেছেন। তিনি কেবল উদন্তপুরী ও বিক্রমশীলা মহাবিহারে আক্রমণের উল্লেখ করেছেন,নালন্দার পর্যন্ত নাম নেননি। তিনি বলেন
❝Then came the Turuska king called the Moon to the region of Antarvedi in-between the Ganga and the Yamuna. Some of the monks acted as the messengers for this king. As a result, the petty Turuska rulers of Bhangala and other places united, ran over whole of Magadhaand massacred many ordained monks in Odantapuri. They destroyed this and also Vikramasila. The Persians at last built a fort on the ruins of the Odanta-vihara.❞
বখতিয়ারের মৃত্যু হয় ১২০৬ সালে । উল্লেখ্য বিহার জয়ের ৩১ বছর পরও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন চালু ছিল । সেসময়ে তিব্বত থেকে ধর্মস্বামী এসে নালন্দা বিহারকে চালু অবস্থাতেই দেখেছেন । সেখানে মঠাধ্যক্ষ রাহুল শ্রীভদ্রের পরিচালনায় ৭০ জন সাধু পড়াশোনা করেছেন। [৬]
এবার কথা হলো ধ্বংসের কথা বারবার লেখা হয়, বলা হয় তাহলে যদি ধরেই নি ধ্বংস হয়েছিল, তাহলে সেটা করেছিলো কে বা কারা ?
স্বামী বিবেকানন্দের দাদা ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন
❝ নালন্দায় লাইব্রেরি কয়েকবার বিধ্বস্ত হয় । P. al. Jor-এর তিব্বতীয় পুস্তকে উল্লিখিত হয়েছে যে, “ধর্মসগন্ধ অর্থাৎ নালন্দার বৃহৎ লাইব্রেরি তিনটি মন্দিরে রক্ষিত ছিল । তীর্থিক (ব্রাহ্মণ) ভিক্ষুদের দ্বারা অগ্নিসংযোগে তাহা ধ্বংস হয়। মগধের রাজমন্ত্রী কুকুতসিদ্ধ নালন্দায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন । সেখানে ধর্মোপদেশ প্রদানকালে জনাকতক তরুণ ভিক্ষু দুজন তীর্থিক ভিক্ষুদের গায়ে নোংরা জল ছিটিয়ে দেয়। তার ফলে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে ‘রত্নসাগর’, ‘রত্নধনুক’ এবং নয়তলাযুক্ত ‘রত্নদধি’ নামক তিনটি মন্দির অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করে। উক্ত তিনটি মন্দিরেই সমষ্টিগতভাবে ধর্মগ্রন্থ বা গ্রন্থাগার ছিল।❞[৭]
P. al. Jor :History of the Rise, Progress and Downfall of Buddhism in India গ্রন্থটা পড়ে দেখতে পারেন।
বুদ্ধপ্ৰকাশ তাঁর ‘Aspects of Indian History and Civilisation’ গ্রন্থে স্পষ্ট করে বলেছেন –❝নালন্দায় অগ্নিসংযোগের জন্য হিন্দুরাই দায়ী।❞
বাংলাদেশে ‘বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধ ভিক্ষু’ গ্রন্থে ভিক্ষু সুনীথানন্দ বলেন ❝ এজন্য কেবল ব্রাহ্মণ্যবাদীরাই দায়ী।❞
মুসলিমবিদ্বেষী লেখক আর্নেস্ট হ্যাভেল লিখেছেন ❝মুসলমান রাজনৈতিক মতবাদ শুদ্রকে দিয়েছে মুক্ত মানুষের অধিকার, আর ব্রাহ্মণদের ওপরেও প্রভুত্ব করার ক্ষমতা । ইউরোপের পুনর্জাগরণের মতো চিন্তাজগতে ডেউ তুলেছে তরঙ্গাভিঘাত, জন্ম দিয়েছে অগণিত দৃঢ় মানুষের আর অনেক অত্যোদ্ভুত মৌলিক প্রতিভার। পুনর্জাগরণের মতোই এও ছিল মূলত এক পৌঢ় আদর্শ।... এরই ফলে গড়ে উঠল বাঁচার আনন্দে পরিপূর্ণ এক বিরাট মানবতা। সেই মানবতার দ্বার উন্মোচনে বখতিয়ার খিলজির বঙ্গজয় ছিল প্রশ্নহীন এক মাইলফলক। বৌদ্ধদের জন্য সেটা ছিল অনেক বেশি গ্লানিমুক্তি। অনেকটা নবজীবন। মুসলিম বিজয় তাদের কোনো কিছু ধ্বংস করেনি, বিপন্ন করেনি তাদের; বরং খুলে দিয়েছে মুক্তির সদর দরজা।❞[৮]
এবং দীনেশচন্দ্র সেনের ভাষায়, ‘মুসলমানগণ কর্তৃক বঙ্গবিজয়কে বৌদ্ধরা ভগবানের দানরূপে মেনে নিয়েছিল।’
নালন্দার ধ্বংস মুসলিমদের হাতে হলে মুসলিম বিজয়কে কেন বৌদ্ধরা ভগবানের অনুদান মনে করবেন ?
ষষ্ঠ শতকের রাজা মিহিরকুল বৌদ্ধদের সহ্য করতে পারতেন না । তিনি যখন পাটলিপুত্র আক্রমণ করেন তখন সম্ভবত তখনই নালন্দা মহাবিহার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ।
এইচ হিরাস এ বিষয়ে লিখেছেন
❝Nalanda University was not far from the capital, Pataliputra and its fame had also reached Mihirakula's ears. The buildings of Nalanda were then probably
destroyed for the first time, and its priests and students dis-persed and perhaps killed.❞[৯]
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় নালন্দা প্রথমবার আক্রমণের স্বীকার হয় শৈব রাজা মিহিরকুলের দ্বারা, এরপর গৌড়রাজ শশাঙ্কের দ্বারা দ্বিতীয়বার, এরপর তিরহুতের রাজা অর্জুনের একদল ব্রাহ্মণের হাতে আবারও নালন্দা আক্রান্ত হয়।
ঐতিহাসিক এস, সদাশিবন অবশ্য নালন্দা ধ্বংসের জন্য মুসলমান ও ব্রাহ্মণ উভয়কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।[১০]
পঞ্চম শতাব্দীতে ব্রাহ্মণরা যজ্ঞাগ্নি নিয়ে নালন্দার প্রসিদ্ধ গ্রন্থাগারে ও বৌদ্ধ বিহারগুলিতে অগ্নিসংযোগ করেন । ফলে নালন্দা অগ্নিসাৎ হয়ে যায়। [১১]
তিব্বতীয় শাস্ত্র ‘ পাগসাম ইয়ান জাং’ -এ ‘ ব্রাহ্মণরা নালন্দার লাইব্রেরি পুড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ’[১২]
ঐতিহাসিক ডি আর পাটিল পরিস্কারভাবে বলেছেন ❝ওটা ধ্বংস করেছে শৈবরা।❞
তিনি এ-ও বলেছেন নালন্দা ধ্বংস হয়েছিল বখতিয়ার খিলজির আক্রমণের আগেই। [১৩]
শৈবরাই নালন্দা ধ্বংস করেছে এই বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন আর এস শর্মা ও কে এম শ্রীমালি।[১৪]
বখতিয়ার খিলজীকে দায়ী করার অপচেষ্টা অধিকাংশ ঐতিহাসিক নাকচ করে দিয়েছেন।
এবিষয়ে দেখতে পারেন
Truschke, A. 2018. The Power of The islamic Sword in Narrating The Death of Indian Buddhism , Journal of The History of Religion , Chicago University press.
রাধাকৃষ্ণ চৌধুরী লিপিতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন যে, নালন্দা ধ্বংসের সাথে বিজয় সেনের সম্পর্ক আছে।
এবিষয়ে দেখতে পারেন Chaudhary, R. 1978. Decline of the University of Vikramasila, Journal of the Indian History.
রাধাকৃষ্ণ চৌধুরী নালন্দায় ১৯৬০-৭২ সাল পর্যন্ত পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক খননের উপর ভিত্তি করে Decline of The University of Vikramasila প্রবন্ধ লিখে সুন্দর করে দেখিয়েছেন যে বখতিয়ার খিলজী'র বাংলায় আগমনের সাথে নালন্দার ধ্বংসের কোনো সম্পর্কই নেই ।
তো কি বোঝা গেলো ?
আর বাংলায় মুসলিম শাসন বৌদ্ধরা কি হিসেবে দেখেছিলো এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশদভাবে লেখা সম্ভব ।
তথ্যসুত্রঃ
১.Journal of The Varendra Research society, 1940.
The Rise and Fall Of Buddhism in South Asia 2008.
২.বাংলায় মুসলিম সমাজ বিস্তারের প্রাথমিক ধারা, এ কে এম শাহনেওয়াজ।
৩.বাঙ্গালীর ইতিহাস সম্বন্ধে কয়েকটি কথা, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৪.ভারতে ইসলাম ভারতীয় মুসলমান, অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৫.ঐ
৬.বায়োগ্রাফি অব ধর্মস্বামী, জি রোয়েরিখ, কে পি জয়সওয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট,পাটনা।
৭. বাঙ্গলার ইতিহাস, ড. ভুপেন্দ্রনাথ দত্ত।
৮.আর্নেস্ট হ্যাভেল, দি হিস্ট্রি অব এরিয়ান রুল ইন ইন্ডিয়া।
৯.এইচ হিরাস, দ্য রয়েল পেট্রনস অব দ্য ইউনিভার্সিটি অফ নালন্দা, জার্নাল অব দ্য বিহার এন্ড উড়িষ্যা রিসার্চ সোসাইটি।
১০. এস এন সদাশিবন, এ সোসাইটি হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া।
১১. P. al. jor: History of Rise, progress and Downfall of Buddhism in India
১২. বি এন এস যাদব, সোসাইটি এন্ড কালচার ইন নর্দার্ন ইন্ডিয়া ইন দ্য টুয়েলভথ সেঞ্চুরি।
১৩.ডি আর পাটিল, অ্যান্টিকোয়ারিয়ান রিমেনস অব বিহার, ( এটা বিহার সরকার কর্তৃক প্রকাশিত, নালন্দা ধ্বংসের উপর একমাত্র লিখিত গবেষণাপত্র)
১৪.আর এস শর্মা ও কে এম শ্রীমালি,এ কমপ্রিহেনসিভ হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া।
এছাড়াও দেখতে পারেন
*বাংলা সাহিত্যে অন্ধকার যুগঃ মিথ ও বাস্তবতা, মুসা আল হাফিজ
*ভারতবর্ষের ইতিহাসঃ রাষ্ট্র ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতা,আমিনুল ইসলাম।